পানি নিষ্কাশনের অভাবে ডুবছে বেনাপোল বন্দর, বিপাকে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা
- বেনাপোল প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ০৯:১৭ PM , আপডেট: ২০ জুন ২০২৫, ০৮:২১ PM
সীমান্তঘেঁষা দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যেন পানির রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরের বিভিন্ন স্থানে হাঁটুপানি জমে। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। তৈরি হয়েছে যানজট, পণ্য ক্ষয়ক্ষতি, এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো নানা সংকট।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকালে বন্দর ঘুরে দেখা যায়, একটি বড় অংশ চ্যাটিজ টার্মিনাল হাঁটু পানি জমে জলাশয়ের রূপ নিয়েছে। অথচ এখানেই পণ্যবাহী ট্রাকের পার্কিং, পণ্য খালাস ও চ্যাচিজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজ চলে প্রতিনিয়ত। পানির কারণে ট্রাক প্রবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় কয়েকটি প্রবেশ গেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলাচল করতে গিয়ে কেমিকেল মিশ্রিত পানিতে নানারকম চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শ্রমিক ও কর্মীরা।
বেনাপোল বন্দরে প্রতিবছর গড়ে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। কিন্তু অধিকাংশ অবকাঠামোই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত। অধিকাংশ গুদাম বন্দর সড়কের চেয়ে নিচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি আটকে পড়ে, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে যেমন আমদানিকৃত পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়, তেমনি পণ্য পরিবহন কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
আরও পড়ুন: হোয়াইট হাউজে আসিম মুনির: যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে নাটকীয় মোড়
বেনাপোল বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদ আলী বলেন, “হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে পণ্য খালাস করতে গিয়ে শ্রমিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন পরিস্থিতি চলছে, কিন্তু কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।”
একই সুরে পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা জানান, বন্দরে পড়ে থাকা কেমিকেল-যুক্ত পানিতে চলাফেরা করতে গিয়ে চুলকানি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘বন্দরে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমেই আমাদের পণ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। অথচ বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় সরকারের। তারপরও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি আমাদের হতাশ করে।’
বন্দরের এই সমস্যার দায় রেল বিভাগকেই দিচ্ছেন বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন। তিনি জানান, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালভার্ট না রেখে বন্দর এলাকায় মাটি ভরাট করায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাশ্ববর্তী হাওড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দরের এমন অব্যবস্থাপনা শুধু বন্দরের কার্যক্রমই ব্যাহত করছে না, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জরুরি ভিত্তিতে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করলে সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।