মোবাইল আসক্তিতে জর্জরিত শিশুরা : হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের সরলতা

মোবাইল আসক্তিতে জর্জরিত শিশুরা
মোবাইল আসক্তিতে জর্জরিত শিশুরা  © প্রতীকী ছবি

শার্শা উপজেলার শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোনের প্রতি বাড়তি আসক্তি এখন সামাজিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে শুরু থেকে রাত পর্যন্ত শিশুরা মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকে। বিশেষ করে ইউটিউবের কার্টুন দেখা ও মোবাইল গেম খেলা তাদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে মনোযোগের ঘাটতি, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, সামাজিক দক্ষতার অভাব এবং ঘুমের ব্যাঘাত। যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. আরিফুজ্জামান জানান, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু মানসিকই নয়, শারীরিক দিক দিয়েও এর প্রভাব মারাত্মক—চোখের সমস্যা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা এমনকি স্থূলতাও বাড়ছে।

শার্শা সদরের এক স্কুলশিক্ষক জানান, আগে বাচ্চারা স্কুল শেষে মাঠে খেলত, গল্পের বই পড়ত। এখন স্কুল থেকে ফিরে সোজা মোবাইলে গেম বা ভিডিও দেখা শুরু করে। অনেকেই ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।

অভিভাবকরাও এখন বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায়। বাগআঁচড়া এলাকার এক অভিভাবক বলেন, আমরা প্রথমে মোবাইল দিয়েছিলাম ওকে চুপ করানোর জন্য। এখন দেখি, ওর মনোভাব বদলে গেছে। পরিবারে কোনো সময় দেয় না। রাতে ঘুমাতে চায় না—আরেকটা ভিডিও দেখতে হবে বলে।

শিশু মনোবিজ্ঞানী রেহান মাহমুদ বলেন, শিশুদের বিকল্প আনন্দ না থাকলে তারা প্রযুক্তির দাসে পরিণত হয়। নিষেধ নয়, চাই প্রতিস্থাপন। খেলাধুলা, গল্প বলা, বই পড়া—এসব ফিরিয়ে আনতে হবে পরিবার ও সমাজকে মিলেই।

শার্শার মাঠে এখন আর আগের মতো কোলাহল নেই। পুতুল খেলা, কাবাডি, কিংবা লুকোচুরি—এসব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই খেলাগুলিই ছিল শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের প্রাকৃতিক উপায়।

সচেতন অভিভাবক ও সমাজকর্মীরা বলছেন, এখনই যদি উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এক অসামাজিক, আবেগ-সংকুচিত প্রজন্ম আমাদের সামনে দাঁড়াবে। আমাদের সিদ্ধান্ত এখন জরুরি—আমরা কি একটি পর্দা-আসক্ত প্রজন্ম চাই, না কি প্রাণবন্ত, সৃজনশীল ভবিষ্যৎ?


সর্বশেষ সংবাদ