সন্তানদের সাফল্যে গর্বিত আদর্শ শিক্ষক দম্পতি ছালেম ও রফিকুন নাহার
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৪:৫৭ PM , আপডেট: ২০ মে ২০২৫, ০৭:৩৬ PM
ভোলার লালমোহন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাষ্টার কটেজে বাস করেন এক আদর্শবান শিক্ষক দম্পতি—এ কে এম ছালেম ও বেগম রফিকুন নাহার। দু’জনেই ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তাঁরা অবসর জীবন উপভোগ করছেন। ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের এই দম্পতি শুধু শিক্ষকের ভূমিকাতেই নয়, এক গর্বিত ও সফল অভিভাবক হিসেবেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে তাঁরা পেয়েছেন জীবনের পরম সার্থকতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এ কে এম ছালেম। তাঁর চাচা, ভোলার প্রথম বিএবিটি মরহুম মকবুল আহমেদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি যোগ দেন চরফ্যাশনের ঐতিহ্যবাহী টি ব্যারেট (টিবি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সততা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার সঙ্গে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অবসর নেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি ব্যয় করেছেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী আজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন—কেউ সচিব, কেউ প্রশাসক, কেউবা সমাজের আলোকিত মানুষ।
অপরদিকে বেগম রফিকুন নাহার (হেনা) বিএ ও বিএড সম্পন্ন করে লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানেও তিনি দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা শেষে অবসর গ্রহণ করেন। এই শিক্ষক দম্পতির পাঁচ সন্তানই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
বড় মেয়ে ছাবিকুন নাহার লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, শাহবাজপুর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে চরফ্যাশন ফাতেমা মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
মেজো মেয়ে একই শিক্ষাপথ অনুসরণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে বোরহানউদ্দিন মহিলা ডিগ্রি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত।
বড় ছেলে মো. সোয়েব মেজবাহ উদ্দিন ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন।
ছোট মেয়ে কামরুন নাহার যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অষ্টম স্থান অধিকার করেন এবং এইচএসসিতে স্টার মার্ক পান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে সহযোগী অধ্যাপক।
ছোট ছেলে এ কে এম ছায়েম ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর নিউ মার্কেট শাখায় সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
সন্তানদের এমন সাফল্যে গর্বিত পিতা এ কে এম ছালেম বলেন, "আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, যে আমার পাঁচ সন্তানই স্নাতকোত্তর পাশ করে নিজ যোগ্যতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। জীবদ্দশায় তাদের সফলতা দেখে যেতে পারছি—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। তবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার স্ত্রী রফিকুন নাহারের। তিনিই সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন।"
সন্তানদের গর্বিত মা বেগম রফিকুন নাহার বলেন, "আমি একজন শিক্ষক ছিলাম, তাই নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করা ছিল আমার দায়িত্ব ও অঙ্গীকার। আজ তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত—এই সফলতা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। সবাই আমার সন্তানদের জন্য দোয়া করবেন।"