গলাচিপায় মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালুর দাবিতে মানববন্ধন

স্থানীয় লোকজনের মানববন্ধন
স্থানীয় লোকজনের মানববন্ধন  © টিডিসি

প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় গলাচিপা পৌর শহরের ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটি দ্রুত চালুর দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১২ মে) সকাল ৯টায় হাসপাতালের সামনে সড়কে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে গলাচিপার সর্বস্তরের মানুষ।

মানববন্ধনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নারী, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন যুব সমাজের প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ জুবায়ের আব্দুল্লাহ, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রুবেল, স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ নজরুল ইসলাম, মোসা. রেখা বেগম ও মো. নবীন হোসেন।

বক্তারা বলেন, জনবহুল ও নদী বেষ্টিত গলাচিপা পৌরসভায় মা ও শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা হলেও সেটি সেবা বন্ধ থাকায় জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের সময়মতো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। হাসপাতালটি পুরোপুরি চালু হলে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো মানুষ উপকৃত হতো, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের জন্য এটি জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসক নাই, সেবা কর্যক্রম নাই এবং ঔষধ পাওয়া যায় না। সেবা কার্যক্রম চালু না থাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছ।

আরও পড়ুন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ বিসিএস আসছে, পদের সংখ্যা কতটি

মানববন্ধন থেকে বক্তারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ ও পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে সেবা নিতে এসে চিকিৎসক না পাওয়ার পাশাপাশি নার্সদের অসদাচরণ এবং রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গলাচিপা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫২ শতক জমির ওপর নির্মিত এই হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে রয়েছে দ্বিতল ভবন, অপারেশন থিয়েটার, ডক্টর ডরমেটরি, গভীর নলকূপ, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো। তবে অভ্যন্তরে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও জনবল। কক্ষগুলো অধিকাংশ সময় তালাবদ্ধ থাকে।২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও আজও হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। ফলে গর্ভবতী মায়েদের বরিশাল কিংবা পটুয়াখালী জেলা শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। পথে সন্তান প্রসব ও মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনার খবরও রয়েছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন হাসান রুম্মান বলেন, জনবল সংকটের কারণে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ছয়জন ইউনিয়ন স্টাফ দিয়ে সীমিত সেবা দেওয়া হচ্ছে। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ছিলেন, তিনিও গত নভেম্বরে বদলি হয়ে গেছেন।

তিনি জানান, বর্তমানে দুজন এফডব্লিউভি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯:৩০টা থেকে বিকাল ৩:৩০টা পর্যন্ত সেবা দিচ্ছেন। ডাক্তার ও স্টাফ নিয়োগের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় কুয়েট শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ

পটুয়াখালী জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম জনবল সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, সরকার ও মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে সারা বাংলাদেশ একই চিত্র পরিবার পরিকল্পনা ও মা ও শিশু হাসপাতালের জনবল সংকট। 

এদিকে গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিও ২০১৮ সালে নির্মাণ শেষ হলেও এখনো চালু হয়নি। ২০১৬ সালে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কেন্দ্রটিও অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ