সেতুর নিচে পাওয়া তরুণের পরিচয় মিলল

  © টিডিসি ফটো

মাদারীপুরে মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কের আড়িয়াল খাঁ সেতুর নিচে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া অজ্ঞাতনামা তরুণের পরিচয় যাওয়া গেছে অবশেষে। তার নাম মো. আসাদুল জামান (১৮)। তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। খবর পেয়ে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে তাদের সন্তানকে শনাক্ত করেন।

রোববার (৪ মে) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন জানান, স্বেচ্ছাসেবক আসাদুজ্জামান সাঈফের কাছে খরব পেয়ে তাকে প্রথমে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় মাদারীপুর সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। পরে তার হাতের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে পটুয়াখালীর কলাপড়া থেকে ছুটে আসেন আসাদুল জামানের মা রাশিদা বেগম। গতকাল তাকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা।

এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল হোসেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের আহবায়ক নেয়ামত উল্লাহ, সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ, তুষার সব্যসাচী, তানভীর, মিলন মুন্সি, কিরণ, হিমেল হাওলাদার, সায়েম, আবদুর রহিম ও বন্যা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১ মে বিকালে মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কের আড়িয়াল খাঁ সেতুর নিচ থেকে মুর্মুর্ষ অবস্থায় আসাদুলকে উদ্ধার করেন মাদারীপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ও রাশিদা বেগমের সন্তান। তারা রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর শাফিয়া শরীফে গত ২৬ এপ্রিল ওরস মাহফিলে আসেন। সেখান থেকে আসাদুল হারিয়ে যান।

পুলিশ ও উদ্ধারকারী ব্যক্তিরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আড়িয়াল খাঁ সেতুর নিচে এক তরুণকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ ও কর্মী আসাদুজ্জামান সাইফ দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ওই কিশোরকে মাদারীপুর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তার কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার হাতের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র শনাক্ত করে তার ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়। ঠিকানামতো পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার পরিবারকে আসতে বলা হয়। তারা শুক্রবার রাতে মাদারীপুরে আসেন।

আসাদুলের মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমি ও আমার স্বামী কলাপাড়া পৌরসভায় ঝাড়ুদারের কাজ করি। ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে আসাদুল সবার ছোট। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে অসুস্থ, মেজ ছেলে পড়ালেখা করে। আর ছোট ছেলে আসাদুল ছোটবেলা থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত। ভালো চিকিৎসা দিতে পারিনি। আমাদের খেয়েপরে বাঁচাই যখন দায়, সেখানে কীভাবে চিকিৎসা করাব? এখন যদি সরকার বা কেউ তার চিকিৎসা করায়, তাহলে আমরা বাঁচতে পারব।’

আসাদুজ্জামান সাঈফ বলেন, ‘আমি বাড়ি থেকে শহরে আসার সময় আমার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি একটি ছেলে আড়িয়ালখাঁ বড় সেতুর নিচে জঙ্গলের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমি ছেলেটিকে দেখতে পেয়ে ফেসবুক লাইভে আসি এবং সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেনকে জানাই। তিনি এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলেটিকে বাইরে রাখা হয়েছে। আমরা ওর জন্য পুরান বাজার গিয়ে নতুন জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গি গামছা কিনে আনি এবং ছেলেটিকে গোসল করিয়ে নতুন জামা-কাপড় পড়িয়ে দিই। ছেলেটি এতটাই অসুস্থ ছিল যে সে কথাও বলতে পারছিল না। আল্লাহর রহমতে ছেলেটি জীবিত আছে এটাই অনেক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘আসাদুলের খোঁজ পেয়ে আমিসহ আরও কয়েকজন মিলে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি। আমরা ওর দেখভাল করি। ভবিষ্যতে কীভাবে তার সুচিকিৎসা পেতে পারে, তার চেষ্টা করছি। কোনোভাবেই যেন এমন একটি তরুণের জীবন শেষ হয়ে না যায়, তার চেষ্টা করব। আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশেই থাকব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence