২২ লাখের বিনিময়ে সব হারিয়ে বাড়ি ফিরলেন লোকমান

লোকমান হোসেন
লোকমান হোসেন  © সংগৃহীত

সর্বস্ব হারিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে লিবিয়ার জিম্মি গেমঘর থেকে ফিরে এসেছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের লোকমান হোসেন নামে এক যুবক। বুধবার (২ এপ্রিল) তিনি জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফেরেন।

লোকমান হোসেন মাদারীপুরের শিবচরের বাশকান্দি ইউনিয়নের দালাল দাদন জমাদ্দারের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলী জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার আশায় বুক বেঁধে পাড়ি দেন ইতালির উদ্দেশে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কাল হয়ে দাঁড়ায়। উল্টো দুর্ভোগ নেমে আসে জীবনে। দালালদের হাতে বন্দি হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিপণের জন্য তার ওপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। শেষে ২২ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়ে দেশে পরিবারের কাছে ফেরেন।

লোকমান হোসেন বলেন, শাহ আলম নামের এক দালালকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলাম বিদেশ যাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আমাকে বিক্রি করে দেন অন্য এক দালালের কাছে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম শিরু ইসলাম নামের আরেক দালালকে। কিন্তু আমাকে ইতালি পাঠায়নি। বরং সেখানে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। বাঁচার জন্য বাড়িতে টাকা চাইতাম। বাড়ির বসতঘরের জমি বিক্রি করে দিয়ে মাদারীপুরের দাদন জমাদ্দারকে দিয়েছি ১২ লাখ টাকা। লিবিয়ায় ত্রিপলি জহুরা ঘাট ওসামা ক্যাম্পের একটি রুমে বন্দি করে রাখে আমাকে। মুক্তিপণের জন্য প্রতিদিন নির্যাতন করত।

তিনি বলেন, মাফিয়াদের কাছ থেকে ৬ জানুয়ারি দালাল দাদন জমাদ্দর আমাকে তার বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে ২০ দিন ছিলাম। এরপর আমাকে লিবিয়ার মিস্ত্রতা থেকে ত্রিপোলিতে আমার পরিচিত লোকের কাছে পাঠিয়ে দিতে ২৬ জানুয়ারি একটি গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ত্রিপোলিতে যাওয়ার সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। দুই মাস দুই দিন জেলে থাকার পর আইওএমের সহায়তায় দেশে আসি।

জিম্মি অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনায় লোকমান হোসেন বলেন, ‘দালালরা চার-পাঁচজন একসঙ্গে মিলে আমাকে রড ও পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে। কানে আঘাত করেছে। কান দিয়ে পয়জন বের হয়েছে। এখন ঠিকমতো কানে শুনি না। সমস্ত শরীরে দাগ। পিঠে গর্ত হয়ে আছে। দুই পায়ের নক ফেলে দিয়েছে। হাতের নক প্লাস দিয়ে তুলে ফেলেছে। হাতুড়ি দিয়েও আঘাত করেছে। আমি যে বেঁচে ফিরব, এটা কখনো ভাবিনি।

লোকমান হোসেনের স্ত্রী রিমি আক্তার বলেন, স্বামীকে মুক্ত করার জন্য দালালের বাড়িতে গিয়ে আমরা অনেক দিন থেকেছি। সে মুক্তি পেয়েছে, সেটা নিশ্চিত হয়ে সেখান থেকে আমরা এসেছি। আমার স্বামী আজ ১১ মাস পর দেশে ফিরেছেন। বেঁচে আছেন কি না, সেটাও জানতাম না।

এ বিষয়ে সাপলেজা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কাজল খান বলেন, ‘লোকমান দেশে ফিরেছেন। শুরু থেকে পরিবারটির পাশে ছিলাম। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার এখন ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘লোকমানের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তিনি অফিসে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence