আহতদের তালিকায় ছেলের নাম না থাকায় আক্ষেপ স্কুল পড়ুয়া সাকিবুল হাসানের বাবার

আহত সাকিবুল হাসান
আহত সাকিবুল হাসান  © টিডিসি সম্পাদিত

সাকিবুল হাসান। বয়স মাত্র ১৩ বছর। পড়াশোনা করছিল টঙ্গী চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (টিসিইপি) স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। কিন্তু একটি আন্দোলন বদলে দিয়েছে তার জীবন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সাকিবুল হাসান কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছিল না, ছিল না কোনো রাজনৈতিক কর্মী। ছিল এক স্কুলপড়ুয়া কিশোর, যে কেবল ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। অথচ জুলাই বিপ্লবের আহতদের তালিকায় নেই তার নাম!

গত বছরের ১৮ জুলাই উত্তরা আজিমপুর বি এন এস সেন্টারে শিক্ষার্থী ও পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ চলছিল। ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে মিলে হামলা চালাচ্ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর। আন্দোলন তখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না, ছড়িয়ে পড়েছিল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।

সাকিবুল সেদিন স্কুল ছুটির খবর শুনে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে কি? ন্যায়বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের কথা বড় ভাইদের থেকে শুনে তাদের সাথে আন্দোলনে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেনি সে। বড় ভাইদের সাথে উত্তরা আজিমপুরের আন্দোলনে যোগ দেয়। আর সেখানেই সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে তার বাম কোমরের সামনে দিয়ে ঢুকে পেছনের দিক দিয়ে বের হয়। 

সহযোদ্ধারা প্রথমে তাকে উত্তরা বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়, তবে কোমরের গুলিবিদ্ধ ক্ষত তাকে সারাজীবনের জন্য দুর্বল করে দিয়েছে। বাবা-মা চান না সে কোনো কষ্টকর পরিশ্রম করুক, কিন্তু বাস্তবতা কতটুকু সুযোগ দেবে সেটাই চিন্তার বিষয়।

আহত সাকিবুল জানান, আমি চাই, আমাদের এই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। আমার এই ত্যাগের স্বীকৃতি চাই। দেশে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে, সবাই ন্যায়বিচার পায়। এটাই আমার চাওয়া।

সাকিবুলের বাসা টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ৪ নম্বর ব্লকে। তার বাবা মো. বিলাল হোসেন, পেশায় একজন রিকশাচালক, সাকিবুলের দুই ভাই অন্যের দোকানে কাজ করেন। 

বিলাল হোসেন জানান, সাকিবুলের চিকিৎসার চিকিৎসার জন্য যা সঞ্চয় ছিল সব খরচ করে ফেলেছেন। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেটাই কি যথেষ্ট?

আক্ষেপ জানিয়ে তার বাবার একটাই দাবি, আমার ছেলের নাম আহতদের তালিকায় প্রথম ক্যাটাগরিতে আসুক। স্বীকৃতি পাক তার ত্যাগের। কারণ সে তো নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে নেমেছিল।

স্থানীয় সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট শাহিন মোল্লা বলেন, সাকিবুলরাই জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়ক। ছোট্ট কিশোর সাকিবুল দেশের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাজপথে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে, অথচ তার নাম আহতদের তালিকায় নেই! তার বয়স, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ও পরিবারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তার নাম আহতদের তালিকার প্রথম ক্যাটাগরিতে থাকা উচিত। সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান, তারা যেন দ্রুত সাকিবুলের নাম আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence