প্রতিদিন হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন হয় ফেনীর জহিরিয়া মসজিদে

 ঐতিহ্যবাহী জহিরিয়া মসজিদে ইফতারের  আয়োজন
ঐতিহ্যবাহী জহিরিয়া মসজিদে ইফতারের আয়োজন  © সংগৃহীত

ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের ঐতিহ্যবাহী জহিরিয়া মসজিদ এখন শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয় বরং হাজারো রোজাদারের ইফতারের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হিসেবে তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে একসঙ্গে ইফতার করছেন এই মসজিদে। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী, পথচারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে এ আয়োজনে অংশ নেন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১,০০০ থেকে ১,২০০ রোজাদার এখানে ইফতার করেন। আসরের নামাজের পর থেকেই মসজিদের ৩০ জন খাদেম ও স্বেচ্ছাসেবক ইফতার প্রস্তুতি ও বিতরণের কাজ শুরু করেন। মসজিদের তৃতীয় তলায় সারিবদ্ধভাবে ইফতার সাজিয়ে রাখা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে রোজাদাররা আসতে শুরু করেন এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বসে অপেক্ষা করেন। ইফতারের সময় পর্যন্ত তারা জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকেন এরপর সম্মিলিতভাবে ইফতার গ্রহণ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের খাদেম ও স্বেচ্ছাসেবকরা অত্যন্ত শৃঙ্খলভাবে ইফতার বিতরণ করেন। ইফতারে থাকে বিরিয়ানি, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, শসা, শরবত, জিলাপি ও পায়েশের মতো সুস্বাদু খাবার।

এই ইফতার আয়োজন রোজাদারদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।

রিকশাচালক শাহ আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে ফেনীতে একা থাকি। কিন্তু একা ইফতার করতে ভালো লাগে না। তাই প্রতিদিন জহিরিয়া মসজিদে চলে আসি ইফতার করতে। এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে একসাথে ইফতার করলে মনে হয় যেন পরিবারের সঙ্গেই আছি।

চাকরিজীবী জয়নাল আবেদীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সারাদিন অফিসের ব্যস্ততার পর একা ইফতার করতে মন চায় না। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়িতে, তাই প্রতিদিন জহিরিয়া মসজিদে এসে ইফতার করি। এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে একসাথে বসে ইফতার করলে একাকিত্ব অনুভব হয় না বরং পরিবারের সান্নিধ্যই পাই বলে মনে হয়।
 
নুরুল হক নামের এক মুসল্লি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইফতার কোথায় করব এটা নিয়ে কখনোই টেনশন হয় না। প্রতিদিন জহিরিয়া মসজিদে চলে আসি। এখানে রিকশাচালক, ভিক্ষুক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতরে বসে ইফতার করি যেটি অত্যন্ত ভালো লাগার বিষয়।

ইফতার আয়োজক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিদিন আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতারি বিতরণ কার্যক্রম। মসজিদের ভেতরে রোজাদাররা সারিবদ্ধভাবে বসে ইফতার করেন। আমাদের জন্য এটি এক মহান সৌভাগ্য যে, আল্লাহপাক আমাদের সুযোগ দিয়েছেন রোজাদারদের খেদমত করার। কেউ চাইলেই এমন আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না এটি এক বিশেষ রহমত।

জহিরিয়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ফারুক হারুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন  ২০০৭ সালে পবিত্র মক্কায় ওমরাহ হজে গিয়ে আমি লক্ষ করলাম, লাখ লাখ মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে একসঙ্গে ইফতার করছেন। দেশে ফিরে এসে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করি এবং গরিব, অসহায়, শ্রমজীবী ও পথচারী রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজনের প্রস্তাব দিই। কমিটির সদস্যরা এতে একমত হন এবং ২০০৮ সাল থেকে মসজিদে বিনামূল্যে উন্নতমানের ইফতার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ১৫০ থেকে ২০০ রোজাদার ইফতার করতেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যাটি ১ হাজারের উপরে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, মসজিদের তহবিল ছাড়াও মুসল্লিদের দান-অনুদানে ইফতারের টাকা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন এখানে চার থেকে পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে একদিনের অর্থ দান করেন। কখনো কখনো, কয়েকজন মুসল্লি একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন করেন। এভাবেই মুসল্লিদের দান-অনুদানের মাধ্যমে আমাদের ইফতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ