বয়স জটিলতা দূর হওয়ায় নিয়োগ চান এনটিআরসিএ’র সনদধারীরা
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০১৯, ১০:৫০ AM , আপডেট: ২৩ মে ২০১৯, ০২:৫৩ PM
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সার্টিফিকেটধারীদের মধ্যে যাদের বয়সসীমা ৩৫ বছর পেরিয়েছে তাদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছিলো। তবে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে ২০১৮ সালের ১২ জুন পর্যন্ত সার্টিফিকেট প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে স্বস্তি ফিরেছে পুরনো সার্টিফিকেটধারীদের মধ্যে। এখন তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে তারা আশা করছেন। এটি নিয়ে রিট করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১২ জুনের পরে যারা এ সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সসীমা কার্যকর হবে। বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ রায় দেওয়ার পর কাজল হোসেন নামে একজন বলেছেন, ‘এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে আবার আমরা জয় পেলাম। এখন এক থেকে ১৪তমদের আর বয়সের বাঁধা থাকল না। আগে থেকেই বলেছি, অর্জিত সনদের মেয়াদ হয়না। এক থেকে ১৪ নিবন্ধিত শিক্ষকদের বয়সের ফ্রেমে আটকাতে পারবেনা, দেশে এখনও আইন-আদালত আছে। এনটিআরসিএ আর কত ভুল করবে? আর ভূক্তভূগী হব আমরা?’
তিনি বলেন, ‘গত রিকুইজিশনে আমাদের ৩৫ বছর বয়সসীমা পার হওয়াদের আবেদনের সুযোগ না দিয়ে এনটিআরসিএ আমাদের ক্ষতি করেছে, তার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই। আমরা একক নিয়োগ চাই। আর সনদের মেয়াদ করতে গিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে হয়রানি করার জন্য আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’ এজন্য সকল নিবন্ধিত শিক্ষক প্রত্যাশীদের প্যানেলে নিয়োগের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ আদেশের ব্যাপারে রিটকারীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লাহ মিয়া জানিয়েছেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আগে কোনো বয়সসীমা নির্ধারণ ছিল না। ২০০৫ সালের পর এ ব্যাপারে একটি রিট হয়। পরে আদালত বয়স নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য রায় দিয়েছিলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে এমপিও নীতিমালায় ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর অনেকে যারা ইতোমধ্যে সার্টিফিকেট নিয়েছেন, তারা হতাশ হয়ে যায়- কারণ তাদের আর সুযোগ ছিলো না। এ কারণে কোর্টে এসেছেন তারা। এ বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। চূড়ান্ত শুনানী শেষে রায় দিয়েছেন, এ বয়সসীমা কার্যকর থাকবে। তবে যারা ইতিপূর্বে সার্টিফিকেট পেয়েছে তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন থেকে এটি কার্যকর হয়েছে অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালের জুনের পরে যারা সার্টিফিকেট পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর কার্যকর হবে। এর আগের সার্টিফিকেট প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে না।’ অর্থ্যাৎ আগের প্রার্থীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত চাকরির বয়স থাকবে বলেও জানান তিনি।
সেলিম রেজা নামে একজন বলেন, ‘৩৫ নিয়ে রায়- এক থেকে ১৪তম পর্যন্ত যারা সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাদের বয়সের কোন বাধা থাকলো না। এর পরে যেকোন নিয়োগে সবাই আবেদন করতে পারবেন।’
তবে এ রায়ে নিয়োগের নিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা মনে করছেন না আগের এনটিআরসিএ সার্টিফিকেটধারীরা। এ ব্যাপারে আপেল মাহমুদ নামে একজন মনে করছেন, ‘এ রায়ে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী যারা মেধাতালিকায় প্রথম দিকে, তারা জয়ী। রায়ে শুধু আবেদন করার বৈধতা দিয়েছে, কিন্ত সরাসরি চাকরি পাওয়ার কোনো আদেশ দেয়নি। তাই এখন তারা এক থেকে ১৪তমদের সাথে পুনরায় মেধাতালিকায় আসবেন। আবার যখন সবার (১-১৪/১৫) কাছ থেকে আবেদন চাইবে তখন তারা আবেদন করতে পারবেন শুধু।’
তিনি বলেন, ‘আবেদনের প্রেক্ষিতে গতবারের মতো প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জাতীয়ভাবে মেধাতালিকা করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। এজন্য রায় মানেই সবার চাকরি হবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। মেধাক্রম ভালো থাকলে চাকরির আশা করা যায়। তবে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি যোগদান করে প্রায় ১০ হাজারের বেশি এমপিও পেয়েছেন এবং আরো প্রায় কয়েক হাজারের বেশি এমপিও পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাদের মধ্য অনেকে আবেদন করবেন না। সে অনুযায়ী বলা চলে এবার কম নম্বরধারী অনেক নিয়োগ পাবেন।’
এদিকে আদালতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যায় হওয়ায় এটি একক নিয়োগ পেতে রিট করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন অনেকে। তবে এটি করা হলে কোনো লাভ হবে কিনা সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা। এছাড়া ৩৫ বছরের বেশী বয়সীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ বন্ধে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন অনেকে।
এনটিআরসিএ সনদধারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণ কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
সেসময় চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ৭২ এনটিআরসিএ সনদধারীর রিটের শুনানি শেষে এই রুল জারি করা হয়। রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মো: জাহাঙ্গীর হোসেন তখন জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ১৬৬টি রিটের চূড়ান্ত রায়ে চাকরি না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন সনদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ সেই রায় উপেক্ষা করে ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালায় চাকরিতে যোগদানের বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রীট আবেদন করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা।
আরো পড়ুন: ২০১৮ সালের আগে এনটিআরসিএর ৩৫ বছর বয়সসীমা কার্যকর হবে না