কারিকুলাম নিয়ে নতুন পরিকল্পনা, মানবিকের শিক্ষার্থীরাও পড়তে পারবেন বিজ্ঞান ও বাণিজ্য

বিভাগ বিভাজন নিয়ে নতুন উদ্যোগ
বিভাগ বিভাজন নিয়ে নতুন উদ্যোগ  © সংগৃহীত

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা চাইলে পড়তে পারবেন অর্থনীতি, পৌরণীতি কিংবা মানবিকের শিক্ষার্থীরা চাইলে পড়তে পারবেন উচ্চতর গণিত, পরিসংখ্যান কিংবা যেকোনো বিষয়। নবম-দশম শ্রেণিতে আগের মতো বিভাগ বিভাজন থাকলেও নিজ বিভাগের বাইরে অন্য যেকোনো বিষয় পড়তে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এমন  নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশের শিক্ষা ও কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যাক্তিরা।

তাদের ভাষ্য, বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী মানবিক, বাণিজ্য কিংবা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার পর অন্য বিভাগের কোনো বিষয় চাইলে পড়তে পারেন না। আবার বাতিল হওয়া কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ১০টি বই পড়ার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। এমন বাধ্যবাধকতা কিংবা শুধু একটি বিভাগে পড়ার নিয়মকে সহজ করতে নতুন করে ভাবছে সরকার। তবে তার জন্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের মতামত গ্রহণের কথা বলছেন তারা।

‘আামি মনে করি কোনো বিছু বাস্তবায়ন করার আগে বিস্তারিত পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষার্থীদের উপর। যদিও কারিকুলাম নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা এনসিটিবির সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য কোনো পরিকল্পনা আমরা এখনো দেখিনি। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে আগে নজর দেয়া উচিত— ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি এসব বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সম্প্রতি গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুষ্ঠানে এসব বিষয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘নবম ও দশম শ্রেণিতে উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞান আবশ্যিক রেখে অন্যান্য বিষয় ঐচ্ছিক করে দেওয়া হবে পরবর্তী লক্ষ্য। এতে মানবিক শাখায় যে আছে, সেও ইচ্ছা করলে বিজ্ঞান নিতে পারে যাতে ভবিষ্যতে সে যেকোনো কিছু হতে পারবে।’

তবে শিক্ষা উপদেষ্টার এই মতামতের পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাক্তিরাও। তাদের মতে এমন নিয়ম চালু করতে গেলে জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা একরকম নয়। ফলে শিক্ষার্থীদের সমানভাবে সুবিধা দিতে পারবে না সরকার। আবার প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষকদের পঠন-পাঠনের মান নিয়েও। এমন অনেক শিক্ষার্থীর বিষয়ে দেখা যায়, যারা শিখনঘাটতি রেখে পরবর্তী শ্রেণিতে যায়। কাজেই কারিকুলামে নতুন করে আবার পরিবর্তন আনা হলে সেটার ফলাফল কেমন হবে তা আগেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন: হ য ব র ল এনসিটিবির বই পরিমার্জন, দায় নেবে কে?

নতুন পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের উপর কেমন প্রভাব রাখবে, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে সরকার এখনো স্পষ্ট নয়। এনসিটিবি এখনো ২০২৫ সালের নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পুরোপুরি তুলে দিতে পারেনি। তার মাঝেই এসব আলাপ। পরিবর্তন করতে হলে প্রশ্ন আসবে, নতুন ভাবনার রুপরেখা কেমন হবে, কোন স্তরে কতটা বাস্তবায়ন করা হবে?

এই অধ্যাপক আরো বলেন, আমি মনে করি কোনোবিছু বাস্তবায়ন করার আগে বিস্তারিত পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষার্থীদের উপর। যদিও কারিকুলাম নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা এনসিটিবির সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য কোনো পরিকল্পনা আমরা এখনো দেখিনি। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে আগে নজর দেয়া উচিত।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, এনসিটিবির অবস্থান পরিস্কার। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টার অবস্থানকে সমর্থন করব। আমরা বরাবরই শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য কাজ করি। যেসব উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের যেগ্যতা বৃদ্ধি করবে এবং আগামীতে তাদের ভালো কিছু করার দ্বার উন্মোচন করবে, আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। বিভাগ বিভাজনকে কঠিন না করে বরং শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দেয়ার আলাপ তারমধ্যে অন্যতম।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের শিক্ষার্থীরাও যেকোনো বিভাগ থেকে পড়ার পাশাপাশি সক্ষমতা থাকা সাপেক্ষে অন্য বিভাগের বই পড়তে পারবেন। তবে বিষয়টির ধরণ কেমন হবে এবং কোন স্তরে কতটা লোড থাকবে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠে আসা দরকার। বিভিন্ন স্তরে পাঠ্যক্রম বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ প্রসঙ্গে করণীয় ঠিক করা হবে। বিষয়গুলো আরো বিস্তর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ক্লিয়ার হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন পদ্ধতির প্রচলন আছে।

আরও পড়ুন: ৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ করেও কথা রাখতে পারছে না এনসিটিবি

অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী গ্রুপ হিসেবে বিজ্ঞান শাখায় থাকলে ঐচ্ছিকভাবে অর্থনীতী পড়ার সুযোগ পায় না। এই ধারাকে পরিবর্তন করা উচিত, এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা। একজন শিক্ষার্থী যেন স্বাধীনভাবে  নির্দিষ্ট গ্রুপে থাকার পাশাপাশি অন্য বিষয় পড়ার সুযোগ পান। এই উদ্যোগের ব্যপক প্রভাব রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ঐচ্ছিকভাবে যেন সাবজেক্ট চয়েজ দিতে পারেন, উদ্যোগটা সে বিষয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence