শেষ বিকেলের মেয়ে: জহির রায়হানের অন্যতম অমর সৃষ্টি
- মারুফা প্রীতি
- প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০১:৪৯ PM , আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ PM
যুবক বয়স, সদ্য চাকরীপ্রাপ্ত চোখে মধ্যবিত্ত হালে সংসার বাঁধার স্বপ্ন। সদা প্রেমিক মন প্রেম খুঁজে পায় কারো হাসিতে, কারো চলনে, কখনো বৃষ্টি আবার কখনো শেষ বিকেলের আলোয়, কখনো গায়ের রঙে, কখনো স্বল্পকথায়, আবার কখনো কারো চঞ্চলতায়। বাস্তবতা আর কল্পনার জগতের মাঝে সে নিজেকে গুলিয়ে ফেলে। মনস্তাত্ত্বিক প্রেম কাব্য রচনায় প্রেমিক কাসেদের উত্থান।
বলছি বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী প্রেম উপাখ্যান শেষ বিকেলের মেয়ে উপন্যাসের কথা।
‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে প্রেম নিয়ে রচিত উপাখ্যানগুলোর মধ্যে ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ পাঠক প্রিয়তার শীর্ষের দিকে অবস্থান করছে। সাহিত্যের সাথে সাইকোলজির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে লেখকের কলমে।
ষাটের দশকের প্রেক্ষাপট, পূর্ববঙ্গে কেরানি পদ তখন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত। তরুণ কেরানি কাসেদের চোখে তখন স্বপ্ন আর বাস্তবতার বিরাট ফারাক। স্বপ্নকে সংগ্রামের গ্রাস থেকে বাঁচাতে নায়কের দোদুল্যমান ভাব ফুটে উঠেছে উপন্যাসে।
লেখকের লিখায় নায়ক কাসেদ মার্জিত ও রুচিবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে পাঠকের কাছে ধরা দিয়েছেন। কাসেদ ভালোবাসে জাহানারাকে। অবশ্য জাহানারাকে ভালোবাসার কথা কখনোই জানাতে পারেনি সে। কাসেদের মধ্যবিত্ত চোখে উচ্চবিত্ত পরিবারের জাহানারাকে বিয়ে করার স্বপ্ন। শহরে ছোট বাড়ি, এক পেয়ালায় চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে জাহানার গলায় গান শোনার স্বপ্ন কাসেদের।
কাসেদ প্রেমে পড়ে শিউলির, শিউলির চঞ্চলতায় কাসেদ ডুবে থাকে। সালমাকেও একসময় ভালোবাসতো কাসেদ, সালমার বিয়ে হয়ে গেছে। অফিস কলিগের মেয়েকেও ভালো লাগতো তার।
নাহার, কাসেদের খালাতো বোন। ছোটবেলায় বাবা-মারা যাওয়ার পর মেয়েটিকে নিজের কাছে রেখে কাসেদের মা আদরে বড় করেছেন। নাহারকে ছোট বোন হিসেবে দেখলেও নাহারের মনোপ্রবৃত্তির খবর লেখক পুরো গল্প জুড়ে দূরে রেখেছেন।
বিজ্ঞানে ‘Stream of Consciousness‘ একটি সাইকোলজিক্যাল টার্ম আছে। যারা খুব দ্রুত বাস্তব থেকে কল্পনা এবং কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে প্রবেশ করে তাদেরকে এই টার্মের অধীনে বিবেচনা করা হয়। তারুণ্যের বহিঃপ্রকাশের ভালোবাসায় লেখক বিজ্ঞানের এই দিকটি সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
কাসেদ কী জাহানারাকে কখনো তার ভালোবাসার কথা জানাতে পারবে? নাহারের দিকটি কি প্রকাশ পাবে? জাহানারা, শিউলি, নাহার নাকি সালমাকে হবে শেষ বিকেলের মেয়ে? জানতে হলে পড়তে হবে উপন্যাসটি।
বাংলা সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জহির রায়হান। একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালকের পদ আলোকিত করে রয়েছেন তিনি। তার ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় বই। এছাড়াও তার লিখা আরেক ফাল্গুন, বরফগলা নদী, সোনার হরিণ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অর্জন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট, ফেনীর সোনাগাজীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে তিনি ১৯৫৮ সালে এখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্র জগতে তিনি একবিংশ শতাব্দী থেকেও এগিয়ে।
১৯৭২ সালে তিনি তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এবং এরপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি কখনো। ধরে নেয়া হয়, পাকবাহিনী ও আলবদরদের হাতে তিনি নিহত হয়েছেন।