বেরোবির তরুণ কবি মুকুলের ‘সময়ের ইতিকথা’
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩৪ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০১:৫৫ PM
আগামী বই মেলায় আসছে তরুণ কবি ও কথাসাহিত্যিক মনিরুল ইসলাম মুকুল এর প্রথম উপন্যাস এবং চতুর্থ গ্রন্থ ‘সময়ের ইতিকথা’। উপন্যাসটি প্রকাশ করছেন আইডিয়া প্রকাশন। প্রচ্ছদশিল্পী এপার -ওপার বাংলার বেশ পরিচিত মুখ সাকিল মাসুদ।
মনিরুল ইসলাম মুকুলের প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহ- কাব্যগ্রন্থ "শান্ত মেঘে লুকিয়ে তুই" (২০২০) উপন্যাসিকা "মৃত্যুর পাণ্ডুলিপি" (২০২১) গল্পগ্রন্থ "শয়তান গ্রহ" (২০২২) নবীন শাখায় পেয়েছেন ইউএস বাংলা সাহিত্য সম্মাননা -২০২২ ।
মনিরুল ইসলাম মুকুল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের একজন শিক্ষার্থী। তার জন্ম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভাতগাঁও গ্রামে। পৈতৃক নিবাস কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন।
"সময়ের ইতিকথা" উপন্যাসটিতে লেখক পুরনো গল্পগুলোকে সময়ের সাঁচে সেঁচে যান্ত্রিকতার গল্পগুলো দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। ফুটিয়ে তুলেছেন- দুঃখ, বেদনা, প্রেম, ভালোবাসা, লোভ, বাংলার পুরনো ইতিহাস আর ঐতিহ্য। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে আমাদের বসবাস। অথচ বর্তমানকে আঁকতে উপন্যাসটিতে লেখক কিছুটা পিছনে ফিরে গেছেন। দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। সেটা বর্তমান সময় থেকে এক দেড় যুগ আগের কথা। সে সময় চরাঞ্চল ছিল সব দিক দিয়েই পিছিয়ে। লেখক কল্পনা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিত্যনতুন গল্পগুলো ।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে যেভাবে পালিত হবে জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী
উপন্যাসটিতে চরাঞ্চলে অভাবের মধ্যে বসবাস করা দুটো পেশাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি। হালুয়া আর বৈঠা চালিত নৌকার মাঝির জীবনকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসটি। চরাঞ্চলটিতে তখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি । কুসংস্কারও যেন নিত্যনতুন সৃষ্টি। উপন্যাসটি শুরু হয় মনসুর আর সদানন্দের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে। মনার জন্ম নিয়ে সমাজে একটা দ্বিমত লক্ষ্য করা গেলেও, মনা সমাজে বেঁচে থাকার একটা লড়াই করে গেছেন নিজেই নিজের সাথে।মনা ভাগ্যের চাকায় জায়গা হয় মুনসুরের ঘরে।মনসুরের পালিতপুত্র মনা। মনা ও শাপলা কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও,পার্শ্ব চরিত্রগুলো ছাড়া উপন্যাসটি যেনো অপূর্ণতাই থেকে যায়।
উপন্যাসটি গড়িয়ে যেতে যেতে খুঁজে পাওয়া যায়- এক সময়ের পরিচিত গোয়ালার গান, খোয়ার, নকশিকাঁথা, আর সময়কে পেছনে ফেলে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বড় বড় কলকারখানাগুলো। শাপলার প্রতি মনার অপ্রকাশিত ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত গোপনেই থেকে যায়। শাপলা সময়ের গল্পে কদিনের জন্য নতুন জীবন শুরু করলেও, জীবনের অপূর্ণতা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শাপলার নতুন সংসারে অভাব কিংবা দারিদ্র্যতার দেখা মেলেনি কখনো। অথচ একসময় ভাগ্যটাই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছ' মাস যেতে না যেতেই তার স্বামী রতন নদীর মাঝপথে নৌকা দুর্ঘটনায় পৃথিবীটাকে বিদায় জানায়।
সময়ের গল্পে চরাঞ্চলেও এক সময় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। নতুন নতুন কলকারখানা, বিদ্যুৎ, বৈঠা চালিত নৌকার বদলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা, গরুর হালের বদলে ট্রাক্টর। সিরাজের লাঠিয়াল বাহিনী কিংবা লতিফের সুদের ব্যবসা উপন্যাসটিতে করুণভাবে ফুটে উঠেছে। মনাকে নিয়ে নতুন করে সংসার পাতার শাপলার আঁকুতি যেনো পাঠকের মনকে উপন্যাসের শেষে ভীষণভাবে নাড়া দেয় -
"জোনাকিরা একটু পর ঘুমিয়ে পড়বে। ওরাও হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। চাঁদের জোছনা কৃপণ হয়ে ওঠে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মনার নৌকায় হ্যারিকেনটা ক্লান্তিহীনভাবে জ্বলছে। ওরা দুজন মুখোমুখি। মনা বলল,
- তুমি চইলা যাও! মাইনষে দ্যাখলে বদনাম দিবো!
শাপলা ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,
- মাঝি আমারে নিয়া যাও তোমার চরে!
সময়ের গল্পে অনেক গল্পই হারিয়ে ফেলেছে মনা। মনার মাঝে আজকে একটা দুঃসাহস কাজ করে। যে সাহস এর আগে কখনোই হয়ে ওঠেনি তার। মনা ধরা গলায় বলল,
- আমার চরে জায়গা নাই!"
লেখক জীবনের বিরহ কিংবা ভালোবাসার অপূর্ণতার মধ্যে দিয়ে উপন্যাসটি ইতি টেনেছেন। এ যেনো সময়ের ইতিকথার সময়ের নীল বেদনার আখ্যান।