৮ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৯, ১২:৩৫ AM , আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯, ১১:৪৮ AM
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিতভাবে বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা চালু নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই আলোচনা-সমালোচনায় কিছুটা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আসন্ন শিক্ষাবর্ষ (২০১৯-২০) থেকে কৃষি ও কৃষির প্রাধান্য থাকা দেশের আট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একই দিনে ও একই প্রশ্নপত্রে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সম্মত হয়েছে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শুরু হবে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির যুদ্ধ। এক দশক ধরে আলোচনার ধারাবাহিকতায় এ বছর থেকে কৃষিবিষয়ক আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমধারার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর কাজটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে দেখভাল করছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই ভর্তি প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরের বছরগুলোতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বে থাকবে। ভর্তি ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী কোন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেবে, তাও তাদের পছন্দের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে।
বর্তমানে দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৯টি। এর মধ্যে ৪৫টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয়। এখন শিক্ষার্থী ও প্রতিযোগিতা দুটোই বেড়েছে। একজন শিক্ষার্থী ১০ থেকে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ভর্তির সময় এলেই দেখা যায় একেকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এতে ছাত্রীরাই বেশি সমস্যায় পড়েন।
এই ভোগান্তি কমাতে ২০০৮ সাল থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেষ্টা করে এলেও সফল হয়নি। অভিযোগ আছে, আবেদন ফরম, খাতা ও পরিদর্শন ফি বাবদ যত টাকা খরচ হয়, তার কয়েক গুণ বেশি টাকা ভর্তি-ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার আয়ের ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রেখে তা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করার কথা। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম মেনে তা করে না বলে অভিযোগ আছে। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখার কথা বলে সমন্বিত ভর্তিতে রাজি হয় না। যেহেতু আলাদা আইনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে, তাই সরকার জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়েও দিতে পারে না।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপাচার্যদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর পরামর্শ দেন। এরপর এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার তৎপরতা ইতিবাচক পথে এগোতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয় ইউজিসি। সেখানেই আটটি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু এখনো রাজি হয়নি, তাই তাঁরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সরকারের লক্ষ্য হলো, পর্যায়ক্রমে একই ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছে এনে একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো। যেমন এরপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ইউজিসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়েই সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর ধাপে ধাপে প্রযুক্তিসহ অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে, গত ৬ মে এক পত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ও ভর্তি পদ্ধতির নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে ইউজিসিকে তাগিদ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ইউজিসির সুপারিশ পেলেই মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।