শেকৃবিতে বিচারহীনতায় বাড়ছে র‍্যাগিং ও মাদকসেবন

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) র‍্যার্গিং ও মাদকবিরোধী অভিযানে একাধিক শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের আশ্বাস দিলেও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অনুপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং ও মাদকসেবন দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রশাসনের এই শীতলতায়  নির্দিষ্ট একটি গ্রুপের কিছু শিক্ষার্থী বারবার একই ধরনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন।

চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল হলে রাত ২টার দিকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র‍্যার্গিং করছিলেন। ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হাতেনাতে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ। উক্ত অভিযানে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। এসময় তারা ভুক্তভোগী জুনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন। তবে ঐ ঘটনায় দেড় মাস অতিক্রম করলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে উক্ত ঘটনায় জড়িত কিছু শিক্ষার্থী অনুষদ ভিত্তিক র‍্যাগিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

রবিবার (২০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ৭২৯ নম্বর কক্ষে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে  অভিযান চালান প্রক্টর মো. আরফান আলি ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আশাবুল হক। অভিযানে সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জুনিয়র ও কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থীকে কক্ষে পাওয়া যায়। এই ঘটনাতেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেখা গিয়েছে।

ভুক্তভোগী ও তাদের অভিভাবকদের ভাষ্য, কয়েকদিন ধরেই ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে র‍্যাগিং চলছিল। প্রমাণ না রাখতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়।

ঐ অনুষদের একাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলেন, এর আগেও ৩-৪দিন র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এসব হয়। আর বাকিরা অংশগ্রহণ করে। অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আক্রমণ করে। পরিবার পর্যন্ত টেনে গালিগালাজ করা হয়। এতে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অনেকে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে। পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে আমরা এর প্রতিকার চাই।'

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় জড়িতরা সাহস পাচ্ছে। শাস্তি না পেয়ে তারা বারবার একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক তৈরি করছে।’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মাঝে মাঝে মাদকবিরোধী অভিযান চালালেও জড়িতদের বিচার না হওয়ায় ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে নিয়মিত মাদক সেবনের মাত্রা বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিজয়-২৪ হলের ছাদে সাত শিক্ষার্থীকে মাদক সেবনরত অবস্থায় ধরেন প্রক্টর। কিন্তু শাস্তি না দিয়ে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

চলতি এপ্রিলের ১৫ তারিখে শেরেবাংলা হলের ১১৬ নম্বর কক্ষে আরেক শিক্ষার্থীকে মাদকসহ আটক করে হল প্রশাসন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে বিষয়টি শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হলেও এখনো  দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু উগ্র ছেলেদের নেতৃত্বেই এইসব র‍্যাগিং এর ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের উচিত তাদের আইডেন্টিফাই করে খুব দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা।তা না হইলে তারা যে কোন মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মো. আরফান আলি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ ভুল করলে আমরা তাদের শোধরানোর সুযোগ দেবার চেষ্টা করি, কিন্তু এটা কেউ দুর্বলতা ভাবলে ভুল হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে এবং শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল লতিফ বলেন, ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করলে তাদের প্রত্যেকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি রিপোর্ট চলে এসেছে। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে  জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence