পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরতা কমাবে বাকৃবি গবেষকদের উদ্ভাবিত ‘সল্যুশন’
- বাকৃবি প্রদায়ক
- প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১১ PM , আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৮ PM

দেশের পোল্ট্রি শিল্প অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভর হওয়ায় খামারিরা মুরগির রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য নিয়মিতভাবে এর ব্যবহার করেন। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দুই সপ্তাহ পর মুরগি বিক্রি করা হলে এর দেহে ক্ষতিকর মাত্রায় ওষুধ থাকে না। তবে অনেক খামারি নিয়ম মানেন না। যেদিন ওষুধ প্রয়োগ করেন, তখনই মুরগি বাজারজাত করেন। ফলে এসব অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সসহ খাদ্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আর এই অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ও তাঁর গবেষক দল বাউসেফ-ভেট নামে এক ধরণের উদ্ভিজ্জ নির্যাস বা সল্যুশন উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণাটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের অর্থায়নে টানা সাত বছর ধরে পরিচালিত হয়েছে।
অধ্যাপক ড. শফিকুলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণা দলে ছিলেন স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান পারভেজ, শাকিল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, তানভীর হাসান, নাজিবুল হক ও আশরাফুল আলম।
১০০ মুরগি পালন করতে প্রায় ২ লিটার সলিউশন লাগে, যার দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা। কিন্তু মুরগির ওজন বাড়ায় এ দাম কয়েক গুণ লাভসহ উঠে আসে। এটি ব্রয়লারের জন্য ১০০ শতাংশ নিরাপদ। এটি দেওয়ার পর দেখা গেছে, কোনো রোগের উদ্ভব হয়নি অর্থাৎ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একদমই নেই।
গবেষণার বিষয়ে ড. শফিকুল বলেন, বাউসেফ-ভেট এক ধরনের সল্যুশন বা উদ্ভিজ্জ নির্যাস যা পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে সক্ষম। নিমপাতার গ্রোথ প্রোমোটিং ইফেক্ট, ইমিউনো স্টিমুলেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এখানে শনাক্ত করা হয়েছে। সেই উপাদান দিয়ে এ সল্যুশন বা নির্যাস তৈরি করা হয়েছে।
অধ্যাপক শফিকুল বলেন, ‘আমরা এখন এটা পেটেন্ট করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমরা এটার ল্যাব ট্রায়াল শেষ করেছি। দিনাজপুর ও গাজীপুরে ফিল্ড ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুরে ফিল্ড ট্রায়ালে এর ব্যবহারে আমরা দেখেছি, প্রতিটি মুরগির ওজন প্রায় ৩৫০-৫০০ গ্রাম বেড়েছে, যা প্রতিটির দেহের ওজনের প্রায় ৩০ শতাংশ। এর স্বাদ সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি মাংসের গুণগত মানও অনেক ভালো।’
সল্যুশনটির দাম সম্পর্কে গবেষক বলেন, ১০০ মুরগি পালন করতে প্রায় ২ লিটার সলিউশন লাগে, যার দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা। কিন্তু মুরগির ওজন বাড়ায় এ দাম কয়েক গুণ লাভসহ উঠে আসে। এটি ব্রয়লারের জন্য ১০০ শতাংশ নিরাপদ। এটি দেওয়ার পর দেখা গেছে, কোনো রোগের উদ্ভব হয়নি অর্থাৎ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একদমই নেই। সতর্কতা স্বরুপ মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও আর কোনো ওষুধ লাগে না, কারণ এ সময় পোল্ট্রি কোন রোগেও আক্রান্ত হয় না।’
আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’
গবেষণাটির অর্জন নিয়ে ড. শফিকুল বলেন, ২০২৫ সালে ৩১তম বাংলাদেশ ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি (বিএসভিইআর) কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই গবেষণার পোস্টার ‘High Performance Liquid Chromatography Analysis of Azadirachta in a Pathway to Drug Discovery for Safe Poultry Production in Bangladesh’ নামে সেরা পোস্টার উপস্থাপনা পুরস্কার অর্জন করেছে, যা আমাদের গবেষণাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে বাউসেফ-ভেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অধ্যাপক শফিকুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন।