আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’

বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’
বুয়েটের ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’  © টিডিসি ফটো

পরিবেশবান্ধব, টেকসই, নিরাপদ, অত্যাধুনিক এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা বর্তমান বিশ্বের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। বিশেষ করে নৌ-পরিবহনের জন্যে এ বিষয়গুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের ডিজাইন করা ফেরি নাইজা স্পিরিট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওএফএসএ) এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে এর ১২তম আসর। ফলাফল প্রকাশ করা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি।

জানা যায়, এবারের ১২ তম আসরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবায়ের ইবনে আওয়ালের তত্ত্বাবধানে সাত সদস্যের দল ‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের খেতাব অর্জন করে, যা বুয়েট ও বাংলাদেশের জন্য গৌরবজনক অর্জন। তাদের পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী ডিজাইন এবং সৃজনশীলতা বিচারকদের মুগ্ধ করেছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয় ডিজাইন জমা দেয়ার কাজ। ফলাফল আসে ৯ ফেব্রুয়ারি। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ইন্দোনেশিয়ার শিপবিল্ডিং ইনস্টিটিউট অব পলিটেকনিক সুরাবায়া। আর যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আইটিএস ইন্দোনেশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়া।

‘টিম ব্ল্যাক পার্ল’র সদস্যরা হলেন মো. সাফায়েত হোসেন শিশির (দলনেতা), মো. আব্দুল কাদের, আবু রাসেল, মাহমুদুল হাসান শাহেদ, আফিফ বিন হাবিব অমিও, মো. আতিকুর রহমান ও মো. কাউসার মাহমুদ জিদান।

প্রথম স্থান অর্জন করায় টিম ব্ল্যাক পার্ল ৫ হাজার ডলার পুরস্কার পায়। এছাড়াও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানের জন্য বরাদ্দ ছিলো যথাক্রমে ৩ হাজার এবং ১ হাজার মার্কিন ডলার। ১১তম, ১০ম এবং ৯ম আসরে টিম ব্ল্যাক পার্ল যথাক্রমে দ্বিতীয়, অনারেবল মেনশন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল, যা তাদের ধারাবাহিক সাফল্যের প্রমাণ।

দলের সদস্য আবু রাসেল বলেন, এ প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট করা থাকে ফেরির রুট, যাত্রী সংখ্যা এবং ধরন। এবারের আসরে রুট ছিল নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের অভ্যন্তরীণ জলপথ ইকোরোড টার্মিনাল থেকে সিএমএস। লাগোস নাইজেরিয়ার একটি অধিক জনবহুল শহর। অত্যধিক জনবহুল হওয়ার কারণে তাদের পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ব্যাঘাত ঘটে। এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যেই লাগোস শহরের ইকোরোডু থেকে সিএমএস ২৫ কিলোমিটার জলপথের জন্যে ফেরি ডিজাইন করাই ছিল মূল বিষয়বস্তু, যা একইসাথে ২০০ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম এবং বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।

আরো পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে জেতার জন্য প্রার্থীদের জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলবে?

দলের আরেক সদস্য আফিফ বিন হাবিব অমিও বলেন, টিম ব্ল্যাক পার্ল’র ডিজাইন করা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত নাইজা স্পিরিট ফেরিটি নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি হালকা এবং দৃঢ় কাঠামোর জন্য ফেরির কাঠামোটিতে অ্যালুমিনিয়াম দেওয়া হয়েছে। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ মিটার প্রস্থের দ্বিতল ক্যাটাম্যারান ফেরিটিতে প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে রিচার্জেবেল ব্যাটারি। 

তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সৌর-বিদ্যুৎ এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থাকবে, যা পরিবেশে ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে দিবে। রিচার্জেবল ব্যাটারিকে চার্জিং করতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট। ডিজাইন অনুযায়ী একটি চার্জিং স্টেশন ইকোরোভু টার্মিনালে স্থাপনের জন্যে প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে ডব্লিওএফএসএ বিশ্বজুড়ে ফেরি দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে নিরাপদ ফেরি ডিজাইন ও পরিচালনার কাজ করে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ফেরি ডিজাইন করা ছাড়াও পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে ফেরি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপদ ফেরি ডিজাইনের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্যেই এ সংস্থা প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক ফেরি ডিজাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ