বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি মাসে সিগারেটে উড়ছে ২৬ লাখ টাকা
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০২ PM , আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:১০ PM

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে চলছে সিগারেটের রমরমা ব্যবসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং আশেপাশের দোকানগুলোতে প্রতিদিন সিগারেট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার টাকার উপরে, যা মাসের হিসেবে দাঁড়ায় ২৬ লাখ টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলেছে, যেহেতু সিগারেট বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়, তাই ক্যাম্পাসে এগুলোর বিক্রিও বন্ধ করা সম্ভব না। তবে ধূমপান আসক্তি ধীরে ধীরে সেবনকারীকে অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দিকে ধাবিত করে। তাই ধূমপানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের বিভিন্ন দোকান, টং এবং আবাসিক হলের ক্যান্টিনগুলোতে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট বিক্রি হয়। আবাসিক হলগুলোতে সিগারেটের ক্রেতা প্রধানত শিক্ষার্থীরাই। পাশাপাশি হলের বাইরে অন্যান্য দোকানগুলোর ক্রেতা একইসাথে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতরা। বিশেষ করে ক্লাস শেষে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে চলে সিগারেটের রমরমা কেনা-বেচা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ৯টি আবাসিক হলের ক্যান্টিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হলগুলোতে দৈনিক প্রায় ২৩ হাজার টাকারও বেশি সিগারেট বিক্রি হয়। শিক্ষার্থী এবং হলের স্টাফরা ক্যান্টিন থেকে ওই সিগারেট কিনে থাকে।
কয়েকটি আবাসিক হলের ক্যান্টিনের কর্মচারীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, কিছু শিক্ষার্থী যদি ১০ টাকা খাবারের পেছনে খরচ করে, তার বিপরীতে ৩০ টাকা খরচ করে কেবল সিগারেটের পেছনেই! ক্যান্টিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সিগারেট।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়ে ২৪টি টং ও দোকানে সিগারেট বিক্রি হয়। দোকানগুলোতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩৭০০০ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। অন্যদিকে কামাল রঞ্জিত মার্কেটের ৫টি দোকানে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬০০০, ফসিলের মোড়ের ৫ টি দোকানে দৈনিক গড়ে প্রায় ১২০০০, নদীর পাড়ে দৈনিক ১০০০ টাকার এবং শেষ মোড়ের কয়েকটি দোকানে দৈনিক গড়ে সর্বমোট ৯০০০ টাকার সিগারেট কেনা-বেচা হয়ে থাকে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রির মোড়, ডেইরি ফার্ম, ফিশারিজ মোড়ের দোকানগুলোতে সিগারেট বিক্রি হলেও শিক্ষার্থীদের আনাগোনা সেখানে অনেক কম বললেই চলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসিলের মোড়ের একজন দোকানী বলেন, বর্তমানে তিনজন ডিলার ক্যাম্পাসে সিগারেট সরবরাহ করে থাকে। তবে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির পর থেকে সিগারেট বিক্রি কিছুটা কমে গেছে।
এ বিষয়ে বাকৃবির হেলথ কেয়ার সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার কাম প্যাথলজিস্ট ডা. আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ বলেন, ধূমপান আমার মতে শুধু এক ধরনের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। ধূমপান একাধারে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সকল ধরনের ক্ষতির কারণ। ধূমপান আসক্তি ধীরে ধীরে মানুষকে অন্যান্য মাদকদ্রব্যের দিকে ধাবিত করে।
‘‘যেহেতু সিগারেট বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়, তাই এগুলোর বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা, ধূমপান না করতে মোটিভেট করা, ধূমপানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো।’’