সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদে তালা, স্লোগানে উত্তাল ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি পেশ
শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি পেশ  © টিডিসি ফটো

ভর্তি পরিক্ষার রাতে সিকৃবিতে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ’ বলা ও ব্যানার ছেঁড়ার ঘটনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড বলার প্রতিবাদে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ সব অনুষদে তালা দেন তারা।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় ‘তুমি কে আমি কে? রাষ্ট্রদ্রোহী রাষ্ট্রদ্রোহী, কে বলেছে, কে বলেছে? প্রশাসন প্রশাসন’, ‘সিকৃবি প্রশাসন, ভুয়া ভুয়া, আমরা কেন রাষ্ট্রদ্রোহী, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। পরে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল শনিবার (২৬ অক্টোবর) প্রথম আলো ও অন্যান্য পত্রিকায় ‘সিকৃবি কর্তৃপক্ষ দ্বারা গত ২৪ অক্টোবরের সংঘর্ষকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ কর্মকাণ্ড ও তদন্তবিহীনভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষার্থী আখ্যা দেওয়া হয়। কোনো রকম প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়া এরূপ মন্তব্যের জন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও সিকৃবি প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। এ ছাড়া তদন্তের অগ্রগতি ও সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি নিশ্চিত, প্রক্টরিয়াল বডির প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবি দ্রুত মানতে হবে।

শিক্ষার্থীদের আট দফার মধ্যে রয়েছে
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তা খসরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিনসহ সবাইকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আরও জোরালো করতে হবে।

৩. ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ভিসি মহোদয়কে রাজনৈতিক ব্যানারে সম্ভাষণকারীদের শাস্তি নিশ্চিতসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে ও স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।

৪. ২৪ অক্টোবর রাতের সংঘর্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রদলের সম্পূর্ণ বিষয় যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্য ও সঠিক বিবৃতি প্রকাশ করতে হবে।

৬. শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে ক্যারি (ফেল করা) বিষয়ের ইমপ্রুভ পরীক্ষা নিতে হবে। শুধু রিক্যারির (একটি বিষয়ে দুবার ফেল) মাধ্যমে ইয়ার ড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।

৭. অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরে পাস মার্ক নিশ্চিত করতে হবে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সার্বক্ষণিক (পুরো সপ্তাহ) খোলা রাখতে হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো মিটিংয়ে আছি। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে সবাইকে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আমার যদি ব্যর্থতা থাকে, সেটা তো তদন্তের ব্যাপার। তদন্তে প্রমাণিত হলে তো পদত্যাগ করতে হবে।

ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতান আহমেদ বলেন, আমরা আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিনিধি চেয়েছি কিন্তু তারা এখনো কিছু পরিষ্কারভাবে বলেনি এবং বিষয়ে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের দাবির পক্ষে থাকবে।

যা ঘটেছিল
গত ২৪ অক্টোবর কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ছাত্রদলের ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে‌। পরদিন এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম আলোয় “সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-এলাকাবাসীর সঙ্গে ‘ছাত্রলীগ-সমর্থিত শিক্ষার্থীদের’ সংঘর্ষ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরদিন সিকৃবির একটি বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ মনে করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ' শিরোনামে একই সংবাদমাধ্যমে আরেকটি নিউজ ছাপে। এর  প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী দেশের ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ১ম বর্ষ (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সব প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার আগের রাতে (২৪ অক্টোবর) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টাঙানো ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা বানচাল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জাতির সামনে হেয়প্রতিপন্ন করেছে বলে সিকৃবি প্রশাসন মনে করে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই রাষ্ট্রবিরোধী ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence