বাকৃবি থেকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অলক, হতে চান গবেষক
- আমানউল্লাহ, বাকৃবি
- প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৭ PM , আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৭ PM
‘আমি ভালো গবেষক হতে চাই। আমি বিশ্ব সেরাদের সাথে কাজ করে শিখতে চাই। আমার লব্ধ জ্ঞান দ্বারা বিশ্ব ও দেশের মানুষের উপকারে অবদান রাখতে চাই। পিএইচডি শেষে দেশে কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সুয়োগ পেলে দেশের জন্যে কাজ করতে চাই। আমার গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সেগুলো ভালো ভালো জার্নালে পাবলিশ করতে চাই।’
এভাবে নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী অলক পন্ডিত।
সম্প্রতি অলক ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপে আমেরিকার ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে একই সাথে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি তিনি ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োসিস্টেমস এন্ড এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ক্লাস শুরু করবেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ইরিগেশন রিচার্স ল্যাবরেটরিতে গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজ করবেন তিনি।
আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নিয়ে অলক পন্ডিত জানান, আমি খুব কম সময় পেয়েছিলাম। মাত্র ৭ দিন সময় পেয়েছিলাম পরীক্ষার প্রস্তুতির। আমার মূল লক্ষ্য ছিলো রাইটিং ও স্পিকিংয়ে ভালো করা। সেটার জন্যে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর টিউটোরিয়াল দেখতাম।
তিনি বলেন, আইইএলটিএসের জন্য আলাদা কোনো বই কেনা হয়নি। অনলাইনেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সবশেষে সন্তোষজনক স্কোর হিসেবে ৭ অর্জন করি। তবে আমাকে পুরো সময়ে সাহায্যে করেছেন বাকৃবির ইরিগেশন এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম. মোস্তফা আমীন এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।
ময়মনসিংহের নেত্রকোনার সদর উপজেলার সতরশ্রী গ্রামের ভজন চন্দ্র পন্ডিত ও অপর্ণা রানী পন্ডিতের ছেলে অলক পন্ডিত। তবে বেড়ে উঠা ময়মনসিংহ শহরেই। ময়মনসিংহের মুকুল নিকেতন স্কুলের পর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ২০১৭ সালে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে বিএসসি ইন এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের জন্য।
প্রথমদিকে তারও সবার মতো বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে দেশে ভালো সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু যখন তিনি ৩ বর্ষের ২য় সেমিস্টারে উঠেন, তখন তিনি ইরিগেশন এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ পছন্দ করেন পড়াশোনার জন্যে। ইরিগেশনের ক্লাসগুলো তার ভালো লাগতে থাকে। এই ভালো লাগা থেকেই যখন তিনি ৪র্থ বর্ষে উঠলেন, তখন তার মনে হলো এই ইরিগেশনের বিষয়গুলো নিয়ে আরও কিছু করা দরকার।
তাই তিনি এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইরিগেশন ওয়াটার নিয়ে কাজ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অধ্যাপকদের মেইল করতে থাকেন। তবে বেশিরভাগ অধ্যাপক তাকে উত্তরে বলেছিলেন আগে অনার্স শেষ করে আইইএলটিএসে স্কোর করে যোগাযোগ করতে। পরবর্তীতে অনার্সের শেষ দিকে এসে তিনি শুধু দুটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করেন।
পরে আমেরিকার ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসরসকে তার সাত সেমিস্টারের ফলাফল দিয়ে মেইল করেন। ওই অধ্যাপক তার সাথে মিটিং করতে আগ্রহী হন।
মিটিংয়ের পর তিনি অলোককে জানান যে অনার্স শেষ হলেই আইইএলটিএস দিয়ে জানাতে। প্রফেসরের কথা মতো অনার্স শেষ করে আইইএলটিএস দিয়ে স্কোর ৭ পান অলোক। তারপর এ বছরের জুলাই মাসে আমেরিকার ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন। আগস্ট মাস রিভিউ চলে।
সেপ্টেম্বর মাসে অলকের অফার লেটার চলে আসে। পরে তার সুপারভাইজার অলোককে নিজের গবেষণা সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন। অলক পন্ডিতের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সকল খরচ ও শতভাগ হেলথ ইন্সুরেন্স বহন করবে করবেন তার সুপারভাইজার। পাশাপাশি তিনি ল্যাবরেটরিতে কাজের জন্যে একটি মাসিক বেতনও পাবেন বলে জানান অলক।
প্রফেসরের সাথে মিটিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, একাডেমিক বিষয় নিয়ে আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি। সর্বপ্রথম নিজের পরিচয় জানতে চায়। এরপরে প্রশ্ন করেন অনার্সে আমার আমার কোন পাবলিকেশন আছে কিনা? থাকলে ভালো আর তা থাকলে অনার্সে আমি কি নিয়ে কাজ করছি। সেখানে আমার কি অবদান ছিল, আমি আরও এটা নিয়ে কি গবেষণা করতে চাই সেটা শুনতে চান তিনি।
তিনি বলেন, আমার প্রফেসর কোন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, তার পাবলিকেশনগুলো আমি পড়ে কি কি ধারণা পেয়েছি জিজ্ঞেস করেন। এছাড়া ডিগ্রী নেওয়ার পরে আমি একাডেমিকে কাজ করতে চাই নাকি কমার্শিয়াল ফার্মে কাজ করতে চাই জিজ্ঞেস করেছিলেন। শেষে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার লক্ষ্য কি এবং ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই?
ইরিগেশন রিচার্স ল্যাবরেটরিতে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজের বিষয়ে অলক জানান, আমি মূলত সেখানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়াটার কনজারভেশন নিয়ে কাজ করবো। যদিও আমি বাকৃবিতে ওয়াটার কনজারভেশন নিয়ে কাজ করেছি। তবে এখন মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে উন্নত করতে কাজ করবো। এজন্য আমাকে অফার লেটার পাওয়ার পর পর প্রোগ্রামিং, এক্সেলের বিভিন্ন কোর্স অফার করেন আমার সুপারভাইজার। যা আমি শেষ করে তাকে জানাতাম।
তিনি বলেন, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি সেটি সারা বিশ্বের মধ্যে এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এ টপ ১০ এর মধ্যে আছে। এছাড়া ইরিগেশন রিচার্স ল্যাবরেটরিতে আমি যে গ্রুপে কাজ করব ওয়াটার রিলেটেড এটা বিশ্বের টপ পাঁচটা গ্রুপের মধ্যে একটি।
যারা উচ্চশিক্ষায় বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্য অলক বলেন, নিজের অনুষদের বিষয়গুলোর জন্য বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকায় যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেগুলা খুঁজে বের করা। নিজের গবেষণা অনুযায়ী যে প্রফেসররা আছেন তাদের একটা লিস্ট করা এবং সে অনুযায়ী রিচার্স প্রপোজাল দিয়ে তাদের ইমেইল করা।
অলক বলেন, আমার সবথেকে বেশি হেল্প করেছে ফেসবুকের একটা গ্রুপ নেক্সটপ ইউএসএ গ্রুপ। সেখানে অনেক অপরচুনিটিস ইনফরমেশন ও বিভিন্ন পার্সোনালিটি আপলোড করা হতো। আমার আগ্রহ ছিল আমি চেষ্টা করছি নিজে নিজে। নিজের আগ্রহ থাকলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।