বাকৃবির হলে ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীদের ৩ ঘণ্টা নির্যাতন

বাকৃবি ছাত্রীদের তাপসী রাবেয়া হল
বাকৃবি ছাত্রীদের তাপসী রাবেয়া হল  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) তাপসী রাবেয়া হলের এক ছাত্রীকে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, হলের ডায়নিংয়ে কুপনের টাকার দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেত্রীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন তিনি। প্রতিবাদের প্রতিশোধ নিতে তাকে ডেকে নিয়ে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি হল প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত ১২টা-৩টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন হল ছাত্রলীগ নেত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী হাফসা তাসনিম। এ ঘটনায় তার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন অংশ নেন। আর ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুরছালিন মুস্তাাকিন মাফি।

অভিযোগপত্রটি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। -হল প্রভোস্ট

এদিকে, ওই ছাত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছে হল শাখা ছাত্রলীগ। একই ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও একটি অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ওই ছাত্রী শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি হল ছাত্রলীগের অরাজনৈতিক কর্মসূচিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে অপপ্রচার চালানোর ঘটনায় জড়িত ছিলেন। সে ঘটনা জানতে তাকে হলে ডেকে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগে মারধর কথাও অস্বীকার করা হয়।

মারধরের ঘটনা পর এদিন দুপুরে হল প্রভোস্ট বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাফিকে হলের গেস্টরুমে ডেকে জোরপূর্বক তার ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে ফোনের লক খুলে দিতে বলে একই হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা। মাফি ফোনের লক খুলে দিতে না চাইলে ৬-৭ জন ছাত্রী তার হাত চেপে ধরে।

আরও পড়ুন: এবার জবির হলে ছাত্রীকে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ

এ সময় একজন এসে তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে ও গলা চেপে ধরার চেষ্টা করে। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে তার উপর চড়াও হতে থাকেন উপস্থিত ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এক পর্যায়ে মাফি চিৎকার করতে করলে ওড়না দিয়ে তারা ভুক্তভোগীর মুখ চেপে ধরা হয়। অবস্থা খারাপ হলে মাফিকে ওয়াশরুমে পাঠানো হয়। তখন মাফি ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলে বাইরে থেকে ক্রমাগত দরজা ধাক্কাতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, মাফিকে নির্যাতনের পর একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রলীগ নেত্রী হাফসা তাসনিম অন্যান্যদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘মাফি মেয়েটা জামায়াত-শিবিরের। ওর সাপোর্টে কিছু আপু ঝামেলা করতেছে। তোরা ওখানে কেউ যাস না। স্যার এবং ছাত্রলীগের ভাইরা আসতেছে। তারা এসে সমাধান করবে।’

হলের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলের ডায়নিংয়ের কুপনের টাকার দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। এরপর থেকেই হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন। গতকাল গেস্টরুম চলাকালীন তাকে ২-৩ বার ডেকে পাঠানো হলেও তিনি যাননি। পরে তাকে জোর করে নিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হয়।

বিষয়টি হলের অভ্যন্তরীণ। তাই আমি প্রভোস্ট স্যারকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পরামর্শ দিয়েছি। -খন্দকার তায়েফুর রহমান, সভাপতি, বাকৃবি ছাত্রলীগ

হলের একাধিক ছাত্রী জানান, হলের ডাইনিং পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। তারা ছাত্রীদের বাধ্য করে ডাইনিংয়ে খাওয়ার জন্য। এছাড়া একদিনের টোকেন পরেরদিন ব্যবহার করতেও ছাত্রীদের বাঁধা দেন। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় মাফির উপরে চড়াও হন হল ছাত্রলীগের নেত্রী-কর্মীরা।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হল ছাত্রলীগও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ২১ নভেম্বর হল ফিস্ট উপলক্ষ্যে লেভেল-০২ এর ছাত্রীদের নিয়ে অরাজনৈতিক আলোচনাকে রাজনৈতিক আলোচনা বলে অপপ্রচার করা হয়। এটা জামায়াত-শিবিরের লোকজন ছড়াতে পারে। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে মুরছালিন মুস্তাকিন মাফি নামে একজনকে পাওয়া যায়। সেজন্য তাকে হলে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এটাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়।

আরও পড়ুন: যবিপ্রবির হলে রড-পাইপ-বেল্ট দিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীকে মারধর

ছাত্রলীগের অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ওই জামায়াত-শিবির সন্দেহভাজন ছাত্রীকে সাধারণ শিক্ষার্থী কর্তৃক কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগ নেবে না। এমতাবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাকে হল থেকে স্থানান্তর করা হোক। এইসঙ্গে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেত্রী হাফসা তাসনিম বলেন, মেয়েটা কোনো প্রোগ্রামে আসে না বলে জানান তার লেভেলমেটরা। এমনকি ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না যাওয়ার জন্যেও অন্যদের নিরুৎসাহিত করে। সে অন্য দল করতেই পারে। তবে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেতে অন্যদের নিষেধ করার বিষয়ে জানার জন্যেই তাকে ডাকা হয়। তবে থাপ্পড় মারা হয়নি, এটি গুজব। আরোও অনেক গুজব ছাড়ানো হয়েছে। একটি কুচক্রি মহল আছে তারা ডায়নিং এবং হলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইন্ধন জুগিয়ে এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করার পায়তারা করছে।

কোনো কারণ ছাড়াই তাকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে তার উপর চড়াও হতে থাকেন উপস্থিত ছাত্রলীগ নেত্রীরা। এক পর্যায়ে মাফি চিৎকার করতে করলে ওড়না দিয়ে তারা ভুক্তভোগীর মুখ চেপে ধরা হয়। -অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। বিষয়টি হলের অভ্যন্তরীণ। তাই আমি প্রভোস্ট স্যারকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পরামর্শ দিয়েছি।

জানতে চাইলে তাপসী রাবেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গোপাল দাস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অভিযোগপত্রটি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে অভিযোগপত্রে কারোর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। যেহেতু ঘটনাটি গতকাল রাতের, তাই এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence