গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
পছন্দের একটি কেন্দ্রও পায়নি ভর্তিচ্ছুরা, দূর হচ্ছে না ভোগান্তি
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৫১ AM , আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৫১ AM
বগুড়ার করতোয়া মাল্টিমিডিয়া কলেজের শিক্ষার্থী নাসরিন আখতার। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের সময় ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রের পছন্দক্রম দিয়েছিলেন বগুড়ার আশপাশের পাঁচটি জায়গায়। তবে একটিতেও সিট পড়েনি তার। এতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে নাসরিনের।
শুধু নাসরিনই নয়; ভর্তিচ্ছুদের বড় একটি অংশ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নিজের পছন্দক্রম অনুযায়ী আসন না পড়ার অভিযোগ তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন আসন বিন্যাসের পদ্ধতি নিয়েও। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি-হয়রানি এবং অর্থ খরচ কমাতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হলেও অনেকের জন্য তা সুফল বয়ে আনছে না।
যদিও শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগকে অহেতুক বলছেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি। তাদের দাবি কেন্দ্র নির্বাচনের যে মানদ্বন্দ দেওয়া হয়েছিল সে অনুযায়ীই আসন বিন্যাস করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের সূচকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যার কারণ তারা নিজেরাই।
তথ্যমতে, আগামী ১৭ অক্টোবর গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রবেশপত্র সংগ্রহের পর থেকেই পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্র না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকের দাবি, এমন কেন্দ্রে তাদের আসন পড়েছে যেখানে এর আগে কখনো যায়নি তারা। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। নিজ জেলা থেকে কেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: ১০০-তে ৯৩ পেয়ে নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম শারমিন
তাসমি সরকার নামে এক ছাত্রী জানান, আমার বাসা রংপুরে। আমার স্কুল-কলেজ থেকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব সামান্য। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সেভাবেই পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সিট পড়েছে গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জে আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। আমার পরিবারেরও পরিচিত কেউ নেই। একদম অচেনা নতুন এক জায়গা। কোথায় থাকবো কিভাবে যাবো? কোথায় যাবো? কোন রাস্তা দিয়ে যাবো কিছুই জানিনা। এমতবস্থায় হয়তো পরীক্ষাই দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন এখানেই থেমে যাবে।
সাইফুর রহিম নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, আমার বাড়ি কক্সবাজার। চট্টগ্রামসহ আশেপাশের পাঁচটি কেন্দ্র ভর্তি পরীক্ষার জন্য পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। অথচ আমার সিট পড়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে আমি কখনও যায়নি। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চেয়ে এখন যাওয়া এবং থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। এর ফলে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।
আরও পড়ুন: বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন-আসন বিন্যাস যেভাবে
ফারিহা ওয়াসিমাত জানান, আমার বাড়ি কুমিল্লা। কুমিল্লা এবং ঢাকার কেন্দ্রে পরীক্ষা কেন্দ্রের পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। আমার সিট পড়েছে পটুয়াখালীতে। একজন মেয়ে হয়ে আমি সেখানে কীভাবে যাবো? গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কবমানোর জন্য। অথচ এখন আমাদের আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কেননা অন্যান্য ইউনিভার্সিটি তাদের কেন্দ্রের কথা আগেই জানিয়ে দেয়। ফলে আমরা সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করি। অথচ গুচ্ছ কমিটি বিজ্ঞপ্তিতে এক ধরনের কথা বলে এখন কেন্দ্র দিয়েছে দূরে। গুচ্ছ কমিটির এমন সিদ্ধান্তে আমার মতো অনেক নারী শিক্ষার্থাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।
মমতাজ নাসরিন নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্র না দিলে কেন্দ্র চয়েস অপশন কেন দেওয়া হলো? চয়েস দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী এসেছে, পটুয়াখালী এর মধ্যে দুইদিন পর বুয়েটের পরীক্ষা। ছাত্ররা পটুয়াখালী যাবে কখন আসবে কখন। প্রশাসনের খামখেয়ালির বলি হবে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: পাস-ফেল থাকছে না গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়
রাজধানীর রামপুরার তরিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পড়ালেখা করেছে ঢাকায়। করোনার কারণে সে তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে অবস্থান করছে। তাই সে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনাসহ আশেপাশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু তার পরীক্ষার কেন্দ্র খুলনায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে সে জীবনে কখনও যায়নি। এমনকি তাদের পারিবারিক কোনো যোগাযোগও নেই।
এদিকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি। তাদের মতে, কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের অবস্থানের (কেন্দ্র হতে দূরত্ব) জন্য ২০ নম্বর, কলেজের অবস্থানের (কেন্দ্র হতে দূরত্ব) ক্ষেত্রে ৩০, এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ১০, এইচএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ২০, এইচএসসি পাসের বছর (২০১৯-০৫, ২০২০-১০) ১০ এবং ছেলে/মেয়ে (ছেলে- ০৫, মেয়ে- ১০) ক্ষেত্রে ১০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। প্রাপ্ত স্কোর ও কেন্দ্রের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি: যেভাবে হবে বিভাগ পরিবর্তন
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের সময় আমরা শিক্ষার্থীদের নূন্যতম পাঁচটি কেন্দ্র পছন্দক্রম দিতে বলেছিলাম। এর মানে এই না যে ওই শিক্ষার্থী কেবল পাঁচটি কেন্দ্রই সিলেক্ট করবে। তারা আরও বেশি কেন্দ্র পছন্দক্রমে রাখলে এই সমস্যা হতো না। যারা ১০টির নিচে কেন্দ্র পছন্দক্রম দিয়েছে কেবল তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র নির্বাচনের সময় আমরা সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে সেটি সবার আগে দেখি। এরপর তার স্কুল-কলেজ দেখা হয়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার্থী মেয়ে না ছেলে সেটিও আসন নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। সবকিছু বিবেচনা করে তবেই কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা তাদের নিজেদেরই তৈরি করা।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগ ও ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।