এবার বসছেন না উপাচার্যরা, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়হীনতার শঙ্কা
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১৫ AM , আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৯ AM
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে তারিখ নির্ধারণ করার জন্য একটি বৈঠকে বসেন উপাচার্যরা। যাতে একই সময়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হয়। সাধারণত ভর্তি পরীক্ষার আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বাংলাদশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ সভাটি আয়োজন করে থাকে। এতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা উপস্থিত থেকে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিন নির্ধারণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
তবে এবার ভর্তি পরীক্ষার আগে সেই সভায় বসছেন না উপাচার্যরা। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে এ নিয়ে কোনও সভা আহবান করা হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। ফলে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয় নিয়ে। নতুন করে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
এবারও প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জানুয়ারি মাসের ১৯ ও ২০ তারিখে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্রাজুয়েট (স্নাতক) প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। এদিন ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’-এর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর 'বিজ্ঞান ইউনিট'-এর ভর্তি পরীক্ষা ১ মার্চ, 'ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট'-এর ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং 'চারুকলা ইউনিট'-এর ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্কন) আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। রাবিতে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উচ্চশিক্ষালয়টিতে ৫ মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে বিভিন্ন ইউনিটের পরীক্ষা চলবে ৬ এবং ৭ মার্চও। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে চবিও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী আগামী ২ মার্চ থেকে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিক্রম শুরু করতে চায় তারা। চবিতে ২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। চবির কোন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কবে, তা নির্ধারণে উচ্চশিক্ষালয়টির সভা হবে আজ মঙ্গলবার। একই সময়ে এবং প্রায় কাছাকাছি সময়ে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার এমন সময়সূচিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই সময়ে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হলে একটিতে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। চবি ও রাবি প্রকাশ করেছে তাতে প্রায় কাছাকাছি এবং একই সময়ে হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছুরা।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, অন্যান্যবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এক সাথে মিলেই ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন। এবার যদি তাই না হয়, তাহলে একই দিনে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের ভোগান্তি লাঘব তো থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস জানিয়েছেন, এ বছর তারা কোনো বৈঠক করবেন না। একক ভর্তি পরীক্ষা না হওয়া এবং গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি হওয়ায় এবার কোনো বৈঠকের প্রয়োজনীয়তাও দেখছেন না তিনি। তার মতে, এবার পাঁচ ছয়টি ভর্তি পরীক্ষা হবে, আশা করছি একই সময়ে কোনো ভর্তি পরীক্ষা হবে না।
তার মতে, এর আগের বছরগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদে বৈঠক হতো যেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির তারিখ একই সাথে না হয়ে যায়—সেজন্য। আমাদের একটি অনানুষ্ঠানিক একটি আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করছে—আশা করছি, একই সময়ে হবে না।
ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ৫৫টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৪৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তিযোগ্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গতবার ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। এবার আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হবে। বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সম্ভবনা নেই।
৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিইউপি ছাড়া বিশেষায়িত তিন বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স, মেরিটাইম, এরোস্পেস) আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে এবারও।
আরও পড়ুন: দুই গুচ্ছে যুক্ত হচ্ছে নতুন অনুমোদন পাওয়া তিন বিশ্ববিদ্যালয়
অন্যদিকে, তিন গুচ্ছে (সাধারণ ২৪টি, কৃষি ৯টি ও প্রকৌশল ৩টি) বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষায় আসার কথা রয়েছে। যদিও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুই গুচ্ছের (সাধারণ ও কৃষি) ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর নিয়ম রয়েছে। অন্যদিকে, ডুয়েটে (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) শুধু ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ রয়েছে। তাই সেখানে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই।