একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনও আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:২২ PM , আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:০৯ PM
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার বিষয়ে দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ জানিয়ে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর আটকে আছে তাদের অনাগ্রহে। গত ৩১ অক্টোবর দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে এ সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়া, কমিটি গঠন, কমিটির আকার, আর্থিক বিষয়াবলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ জানায় ইউজিসি। তবে এখনও সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তির বিষয়ে আশা দেখছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ (এইউবি)’।
এবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাদের ভাবনা নিয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের (এইউবি) সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমানের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস জানিয়েছেন, এ বছর আমরা কোনো বৈঠকের চিন্তা করছি না। এছাড়াও কোনো বৈঠক করার প্রয়োজনীতাও দেখছেন না তিনি।
তার মতে, এর আগের বছরগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদে বৈঠক হতো যেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির তারিখ একই সাথে না হয়ে যায়—সেজন্য। এবার যেহেতু একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও সুযোগ রয়েছে; সেজন্য আমরা এখনও কোনো বৈঠকের বিষয়ে ভাবছি না। তবে প্রয়োজন হলে বৈঠক হতে পারে বলেও জানান এই উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তাদের এই শীর্ষ নেতা।
এর আগে ইউজিসি থেকে পাঠানো সব সুপারিশ যাচাই-বাছাই করার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর দেশের উচ্চশিক্ষা তদারক সংস্থা ইউজিসির এসব প্রস্তাবের খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের পর তার রাষ্ট্রপতি ও দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। নিয়ম অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ পাওয়ার পর তা চূড়ান্ত করে আপাতত অধ্যাদেশ আকারে সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্য পালনীয় আকারে জারি করা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনও খসড়াটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে না যাওয়ায় আবারও অনিশ্চয়তার দিকেই যাচ্ছে দেশের সব উচ্চশিক্ষালয়ের জন্য একটি একক ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ।
নিয়ম অনুযায়ী, দেশের উচ্চশিক্ষা তদারক সংস্থা ইউজিসির এসব প্রস্তাবের খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের পর তার রাষ্ট্রপতি ও দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে পাঠাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর তা চূড়ান্ত করে আপাতত অধ্যাদেশ আকারে সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্য পালনীয় আকারে জারি করা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ খসড়া রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে না গেলে আটকে যেতে পারে অধ্যাদেশটি। ফলে দেশের সকল উচ্চশিক্ষালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ আবারও অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউজিসি।
এবার যেহেতু একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনও সুযোগ রয়েছে; সেজন্য আমরা এখনও কোনো বৈঠকের বিষয়ে ভাবছি না। তবে প্রয়োজন হলে বৈঠক হতে পারে—অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বর্তমানে তারা যাচাই-বাছাই করছে ইউজিসির খসড়া প্রস্তাবটি। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে একটি বৈঠক করবেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সুপারিশগুলো রাষ্ট্রপতি ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে এ নিয়ে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হতে পারে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
ইউজিসির খসড়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভার বিষয়ে সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো তারিখ জানাতে পারেননি। এছাড়াও এ মাসে সভা হবে কিনা— এ বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান মন্ত্রী। মন্ত্রণালয় কবে নাগাদ এ নিয়ে বৈঠকে বসতে পারে তা স্পষ্ট করতে পারছেন না খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর এ নিয়ে প্রস্তাবনার খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। এই অধ্যাদেশ জারি হলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তি পরীক্ষায় আসা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।
ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের আগ পর্যন্ত ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যাই থাকুক না কেন; এই অধ্যাদেশ তার উপরে প্রাধান্য পাবে। কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটিকে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির নতুন ওই সুপারিশের ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা একক একটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগদানের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছিল। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে অধ্যাদেশ জারির পর ভর্তি প্রক্রিয়াটি শুরু করার কথা ছিল দেশের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) মো. আবু ইউসুফ মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছিলেন, জাতীয় পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ (এনটিএ) গঠনের নির্দেশনা জারির পর ইউজিসি একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে একটি বৈঠক করব; এরপর এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের কার্যালয়ে পাঠাব। তারপর সেখান থেকে এ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার কথা রয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, খসড়া প্রস্তুত করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর দায়িত্ব ছিল ইউজিসির; আমরা তা পাঠিয়েছি। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠাতে না পারলে অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগটি। সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একক ভর্তির বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা উচিত বলেও জানান ইউজিসির ওই কর্মকর্তা।