জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে কেন

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে যথাক্রমে ‘এ’ এবং ‘এ’ মাইনাস ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম সারির একটি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন সুমন (ছদ্মনাম) নামে শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স হয়নি সেঁজুতি (ছদ্মনাম) নামে আরেক শিক্ষার্থীর। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত একটি কলেজে ভর্তি হয়েছেন।

সুমন কিংবা সেঁজুতির মতো উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে ঢাকা কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম হওয়ায় পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না অনেকেই।

নিয়ম অনুযায়ী, দেশের যেকোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তিচ্ছুদের অতিক্রম করতে হয় ভর্তি পরীক্ষায়। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস অনুযায়ীই এ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিগত কয়েকবছরে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ নম্বর পাচ্ছেন না অনেক শিক্ষার্থী। এমনকি অনেকে অর্জন করতে পারছেন না পাস নম্বরও।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ১২০ নম্বরের মেধাস্কোরের উপর ভিত্তি করে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে ৬০ নম্বর এমসিকিউ, ৪০ নম্বর লিখিত এবং ১০ নম্বর করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হিসেবে করা হয়। কম জিপিএ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রসঙ্গে সুমন জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল পিছিয়ে থাকলেও ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করাতে তিনি প্রথম সারি একটি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সেুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে, দুটোতেই জিপিএ-৫ পাওয়া সেঁজুতি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো না করায় ফলাফলের মেধাতালিকা তো দূরের কথা, পাসও করতে পারেননি।

ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে যেভাবে মেধাতালিকা করা হয়

জানা গেছে, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। তাদের বেশিরভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট সর্বোচ্চ পাসের হার ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ‘বিজ্ঞান ইউনিট’র ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৩ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ১০৯ জন। পাসের হার ৯.৪৩ শতাংশ। কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৯.৬৯%। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল  ১ লাখ ১৫ হাজার ২২৩ জন। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৬৯ জন। 

মুখস্থ করেও পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসতে পারে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় তা সম্ভব না। যেমন একজন হয়ত নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পড়ে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে পারে কিন্তু সে যদি এসব বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চায় তাহলে তাকে কিন্তু অনেক বেশি জানতে হবে-আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের (গ ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষার পাস করেছিলেন মাত্র ১১.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ‘গ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৩৮ হাজার ২২৫ শিক্ষার্থী। পাস করেছেন মাত্র ৪ হাজার ৫২৬ শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভূক্ত এই ইউনিটে গতবার পাসের হার ছিল ১৪.৩০ শতাংশ। চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১২ জন এবং পাসের হার ৪.৪৯ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটে পাসের হার ছিল ৪৫.২২ শতাংশ, এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৫৯ হাজার ৫০২ জন, এদের মধ্যে পাস করেছিলেন ২৬ হাজার ৯০৮ জন। বি ইউনিটে পাসের হার ছিল ২৯.২৮ শতাংশ এবং পরীক্ষার্থী ছিল ৪২ হাজার ১৯০ জন, সি ইউনিটে পাসের হার ছিল ২১.০৫ শতাংশ এবং পরীক্ষার্থী ছিল ১৫ হাজার ৭৬১ জন, ডি ইউনিটে পাসের হার ছিল ৩২.৭৮ শতাংশ এবং পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ হাজার ৫৭জন। এছাড়া ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটে পাসের হার ৪৩ দশমিক ৩৫, বি ইউনিটে ৫৬ দশমিক ২৬ এবং সি ইউনিটে ৬৩ দশমিক ৬৪।

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার হল

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম ৩০ কিংবা ৪০ নম্বর পাননি। অথচ তাদের প্রায় সকলেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছিলেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, পাবলিক পরীক্ষা আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বেছে নিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় কিন্তু পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ বা ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে এমন কোনো নির্দিষ্টতা নেই। এছাড়া সিলেবাসের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পড়েই পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল সম্ভব কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় সেটি সম্ভব নয়।

অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার মতে ফলাফলের এই পার্থক্যটা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ধরনের ওপর নির্ভর করে। যে শিক্ষার্থী পড়া না বুঝে মুখস্থ করে অথবা সম্পূর্ণ বই না পড়ে শর্ট সাজেশন বা নির্দিষ্ট কিছু টপিক পড়ে ভালো ফলাফল করছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারছে না। আবার যে শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ মূল বই ভালোভাবে বুঝে পড়েছে সে দেখা যাচ্ছে জিপিএ-৪ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থী বাদ দেয়া। অপরদিকে পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ ভালো ফলাফল করলেও কিন্তু সমস্যা নেই। এ কারণে দুই পরীক্ষার ফলাফল একইরকম না হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক

“আরেকটা বিষয় হল মুখস্থ করেও পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসতে পারে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় তা সম্ভব না। যেমন একজন হয়ত নির্দিষ্ট কিছু বিষয় পড়ে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে পারে কিন্তু সে যদি এসব বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চায় তাহলে তাকে কিন্তু অনেক বেশি জানতে হবে। এককথায় ভর্তি পরীক্ষা হলো এমন এক পরীক্ষা যেটা শুধু প্রকৃত মেধাবীরাই অতিক্রম করতে পারে।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence