শহীদ নাসিরের রেজিস্ট্রেশন কার্ড এখনও মাদরাসায়, জানেন না বাবা
- মির্জা নাদিম, তা'মীরুল মিল্লাত প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১১:৫৫ PM , আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৫:৩৩ PM
স্বপ্ন ছিল পরীক্ষার হলে বসে আলিম পরীক্ষা দেওয়া। হাতে থাকবে রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড—সবার মতো তিনিও পরিশ্রমের ফসল তুলবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন কেড়ে নিল স্বৈরাচারের বুলেট। ২০ জুলাই ২০২৪, গাজীপুরের টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মাদরাসা শিক্ষার্থী নাসির ইসলাম। আজও তার বাবার হাতে পৌঁছেনি সেই রেজিস্ট্রেশন কার্ড।
২০০৪ সালে রংপুর জেলার কাউনিয়া থানায় জন্ম নাসিরের। গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন। পড়াশোনা টঙ্গীতে অবস্থিত অন্যতম প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায়, আলিম ২০২৫ এর পরিক্ষার্থী ছিলেন। মাদরাসার পকেট গেইটের নাম পরিবর্তন করে তার স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে শহীদ নাসির গেট।
জুলাই-আগস্ট ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনের সময়, টঙ্গীর এশিয়া পাম্প এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর কুর্মিটোলা মেডিকেলে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
শহীদ নাসির ছিলেন পরিবারের একমাত্র ছেলে, তার রয়েছে দুটি বোন। এখনো ভাইয়ের শূন্যতায় কাঁদছেন তারা।
শহীদের বাবা মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি জানতাম না রেজিস্ট্রেশন কার্ড মাদরাসায় আসছে কি না; কেউ কল দেয়নি। আমি ছেলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড আর দাখিলের সার্টিফিকেটটা স্মৃতি হিসেবে সংগ্রহ করে রেখে দিতে চাই।
মাদরাসার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস সাইদুল ইসলাম বলেন, উচিত ছিল ক্লাস টিচারের পক্ষ থেকে নাসিরের পরিবারকে বিষয়টি জানানো। আমরা ছাত্রসংসদ থেকে কল দিয়েছিলাম, কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল।
তিনি আরও বলেন, শহীদ নাসিরও একদিন স্বপ্ন দেখতেন রেজিস্ট্রেশন কার্ড হাতে নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে। কিন্তু স্বৈরাচারের বুলেট কেড়ে নিয়েছে সেই স্বপ্ন, তার পরিবারের স্বপ্ন।
শহীদ নাসিরের সহপাঠী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের সাথে একসাথে হলে যাওয়ার কথা ছিল নাসিরের। রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং এডমিট কার্ড গ্রহণ করার সময় নাসিরের কথা মনে পড়েছে বারবার। আমরা দুনিয়াবী পরীক্ষার এডমিট কার্ড গ্রহণ করলেও শহীদ নাসির জান্নাতের এডমিট কার্ড নিয়ে জান্নাতের পাখি হয়ে চলে গেছেন। জান্নাতে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
অপর সহপাঠী আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, নাসির শুধু সহপাঠী না, ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। খুব যত্ন করে পড়তো। আজ আমরা তাকে মিস করি খুব। তবে তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে না পেরে আমরা লজ্জিত এবং ব্যর্থতা স্বীকার করছি।
শহীদ নাসিরের রেজিস্ট্রেশন কার্ড যেন এক নীরব প্রতিবাদ হয়ে পড়ে আছে মাদরাসার অফিসে। রাষ্ট্র কী কখনো শুনবে সেই নীরবতা? বিচার করবে খুনিদের এমন প্রশ্ন তুলেন নাসিরের আরেক সহপাঠী জুবায়ের আব্দুল্লাহ।