শখে আনন্দ, শখে আয়

জীবনের গল্প বলেন, জীবন ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন, ধারণ করেন। মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিকে ফ্রেমে বন্দি করেন। এসব কিছু ক্যামেরার লেন্সে দিয়ে করেন বিজু রায়। সবাই বিজু দা বলেই ডাকেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগও সাংবাদিকতা থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার ফটোগ্রাফি শুরুর গল্প, ফটোগ্রাফি নিয়ে নানান ভাবনা চিন্তাও নতুনদের জন্য পরামর্শের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফটোগ্রাফার হওয়ার শুরুর গল্পটা যদি বলতেন?
বিজু রায়: গল্পটা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিভাগের প্রিয় এক শিক্ষকের ক্যামেরায় তাঁর হাত ধরেই। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘ফটোগ্রাফিক সোসাইটি’র বন্ধুদের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা। হাঁটতে চলতে, গল্পে কথায় ওদের থেকে শেখার শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে উঠে ফটো সাংবাদিকতা কোর্সের সুবাদে ক্যামেরা কেনা। সেটা ২০১৫ সালের কথা; মার্চের ৮ তারিখে নিকন ডি৭০০০ মডেলের ক্যামেরা কিনে যাত্রা শুরু ফটোগ্রাফি জীবনের। এরপর সময় আর অসমেয়র ফাঁক গলিয়ে বের হওয়া ফটো তুলতে। ধীরে ধীরে ছবির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হওয়া। অন্য ফটোগ্রাফারের তোলা ছবিগুলো দেখা শুরু। এইতো, শুরু হয়ে গেলো- ফটো বা ছবি তোলা, মানে সময়কে ফ্রেমে বন্দী করার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন ধরনের ফটোগ্রাফি করেন এবং কেনো করেন?
বিজু রায়: ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ওয়েডিং ফটোগ্রাফির ওপর একটি কর্মশালার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। সেখানে প্রশিক্ষণ দিতে আসেন ওয়েডিং ফটোগ্রাফি জগতে অন্যতম নাম গুণী ও প্রিয় ফটোগ্রাফার এম আমিনুর রহমান। সেখান থেকে তাঁর ধারণ করা বেশ কিছু ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হই। কর্মশালা শেষে তিনি যখন প্রশ্ন করেন, ‘কে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করতে চান?’ সবার আগে হাত তুলে বলেছিলাম, ‘ভাইয়া, আমি!’।

তার কিছুদিন পর ‘চেকমেট ইভেন্টস’র মালিক ও প্রধান ফটোগ্রাফার এম. আমিনুর রহমান ভাইয়ের সাথে দেখা করি। তার কাছে কাজ শিখতে চেয়েছিলাম। কাজ করতে চেয়েছিলাম কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই। কিন্তু সেখানে পারিশ্রমিক দিয়েই আমাকে কাজ করা ও শেখার সুযোগ করে দেন প্রতিষ্ঠানটি। একেবারে শিক্ষানবীশ মানে ইন্টার্ন হয়ে শুরু করি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি। মূলত সহকর্মীদের সাথে ছবি তুলতে গিয়ে তাদের কাছেই শিখেছি সব থেকে বেশি।

আসলে বলতে গেলে, ওয়েডিং ফটোগ্রাফিটাই করছি, অভ্যাসের মতো হয়ে যাওয়ায় কখন যেন ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তে। মানুষের সুন্দরতম আনন্দের মুহূর্তগুলোর সাথে নিজেকে জড়িয়ে, ছবি তুলে সেই আনন্দের মুহূর্তগুলো স্মৃতির সাথে ফ্রেমবন্দী করে কি যেন এক অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছি। ওয়েডিং এর পাশাপাশি ছবি ধারণ করছি মানুষ আর প্রকৃতির যাকে বলে পোট্রেট আর ন্যাচার ফটোগ্রাফি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে কেমন বাঁধা বা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। সেসব যদি কিছু বলতেন?
বিজু রায়: প্রতিবন্ধকতা ছিলো অনেক। নানা বাধা এসছে বিভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ছবি তুলতে গিয়ে, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করে। তবে নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে স্বল্প সময়েই বেশ কিছু ধারণা তৈরি হয় এ বিষয়ে। এ অল্প সময়ে অনেক কিছু দেখা...চলমান সেই দেখা...দেখা থেকে যেমন শিখেছি এখনো দেখছি আর শিখছি প্রতিনিয়ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ। এখানকার প্রকৃতি আর তার মানুষের নানা মাত্রিক জীবন আচরণ এক ধরনের মুগ্ধতা আর ঘোরের সৃষ্টি করে আমার ভেতর। সুন্দরকে ধরে রাখতে ছবি তুলছি, তুলতে চাই আরো। ছবি তুলতে গিয়ে চলে যাচ্ছি মানুষের আরো অনেক কাছাকাছি। ভিন্ন ভিন্ন পরিবার ও মানুষের আলাদা আলাদা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নিজের ঝুলিতে জমছে আরো নতুন কিছু অভিজ্ঞতা।

পরিবেশ, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আনুষ্ঠানিকতা ও মানুষের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। দেশের বাইরের সংস্কৃতি ও পরিবেশে কাজ করে এক নতুন অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ভিন্নমত, নানান মানুষের নানান কথার সম্মুখীন হয়েছি। এই অল্প সময়ে অনেক কিছুই দেখেছি-শিখেছি। হাজারো সমালোচনা নিয়ে, বস্তুত পক্ষে ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে প্রকৃত মানুষ হবার সীমাহীন পথে যাত্রা করে নিজস্বতার গণ্ডি পেরিয়ে মিশে যাচ্ছি সময়ের সাথে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অর্থ উপার্জনের খাত হিসেবে ফটোগ্রাফি কেমন?
বিজু রায়: ফটোগ্রাফিতে লেগে থাকাটা জরুরি। কারণ অর্থ উপার্জনের জন্য খুব বড় একটা খাত এটি। ফটোগ্রাফির সব সেক্টরেই ভালো পরিমান অর্থ উপার্জন সম্ভব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা ফটোগ্রাফার হতে চায় তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ
বিজু রায়: চোখ মানুষের সবচেয়ে বড় ক্যামেরা। চোখ দিয়ে দেখার সাথে পর্যবেক্ষণ দক্ষতা বাড়াতে হবে। যা দেখবে তাই তুলে যেতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করা আর অগণিত ছবি দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
বিজু রায়: গত ৫ বছর একাধারে শুধু ছবি তুলছি; ছবি তুলতে চাই আজীবন। তবে নিজের স্বপ্নের পাশাপাশি বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণের চেষ্টাও করছি। ফটোগ্রাফি ছাড়াও চেষ্টা করছি পড়াশোনা করার।


সর্বশেষ সংবাদ