ঢাকায় বছরে জনপ্রতি ২২ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার হয়

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে, আর রাজধানী ঢাকায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য—ঢাকায় এক বছরে একজন মানুষ গড়ে ২২ কেজিরও বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করে। এই প্রবণতা শুধু পরিবেশ নয়, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই বাস্তবতা সামনে এনে প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতা বাড়াতে আজ রবিবার (২৯ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘প্লাস্টিক থেকে মুক্ত হোন’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইকোবাজার। আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মিলনায়তনে একশনএইড বাংলাদেশ, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম), সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ (সিসিজে-বি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৫ সালে যেখানে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ব্যক্তি বছরে ৩ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করতেন, সেখানে ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কেজিতে। কিন্তু শুধু ঢাকার চিত্র আরো ভয়াবহ। ঢাকায় জনপ্রতি ব্যবহার ২০২০ সালেই পৌঁছে গেছে ২২.২৫ কেজিতে। যা ২০০৫ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। বর্তমানে এর পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বক্তারা। 

এই ইকোবাজারে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে প্রদর্শিত হয় পাটজাত পণ্য, বাঁশের তৈরি আসবাব, এবং বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণ। উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম। 

তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সংকট। এটি মোকাবিলায় সরকার বহুমুখী নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা প্লাস্টিক পণ্য আমদানি বন্ধ করে বরং পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য রপ্তানির ওপর জোর দিচ্ছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে আমরা পরিবেশগত নীতি (ইপিআর) সংশোধনের মাধ্যমে আরও জোরদার করেছি। আমাদের প্রচুর নিজস্ব প্লাস্টিক বর্জ্য আছে যা পুনর্ব্যবহার করে রপ্তানি করা যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে একাধিক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, যার ৯৬ শতাংশই সরাসরি বর্জ্যে পরিণত হয়। প্রতিদিন উৎপন্ন হয় প্রায় ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, যার অর্ধেকেরও বেশি নদী-নালা ও ল্যান্ডফিলে গিয়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে।

বক্তারা বলেন, শুধু আইন করে নয়, বরং সচেতনতা ও উদ্ভাবনকেই হতে হবে এই সংকট থেকে উত্তরণের মূল চাবিকাঠি। তারা সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবনে বিনিয়োগ এবং ছোট উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার ওপর জোর দেন।

প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোয় আইনের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি উল্লেখ করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বছরে ১৭-২০ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন করি, যা প্লাস্টিকের একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে। বুড়িগঙ্গার মতো আমাদের নদ-নদীগুলো মানবসৃষ্ট বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা বিকল্প ভাবছি না। কেবল আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।’ 

প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে নতুন উদ্ধাবনগুলোকে প্রনোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এই চর্চা শুরু করতে হবে। নতুন উদ্ভাবনে প্রণোদনা দিয়ে ছোট ছোট উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে, কারণ প্রকৃতিকে রক্ষা করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

একশনএইড ইন্টারন্যাশনালের আইএইচএআরটি-এর গ্লোবাল রেজিলিয়েন্স অ্যাডভাইজার তানজীর হোসেইনের সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় সহযোগিতা ও উদ্ভাবন জরুরি। যুবসমাজ ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে টেকসই সমাধান গড়ে তুলে পরিবেশ রক্ষা করি।’

অনুষ্ঠানে এসময় পরিবেশ নীতি নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ ও প্লাস্টিক সংক্রান্ত গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষাবিদ ও গবেষক, পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনে বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ সন্ধানকারী বাণিজ্যিক অঙ্গন এবং টেকসই উন্নয়নে আগ্রহী উদ্যোক্তা ও যুবনেতারাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence