প্রচণ্ড গরমে বিশুদ্ধ পানির খোঁজে বিপন্ন দুর্গাপুরের মানুষ

পানি সংকটে নেত্রকোনার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ
পানি সংকটে নেত্রকোনার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ  © সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছে গারো, হাজং ও বাঙালি সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ। দুর্গাপুর সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের পাহাড়ঘেরা ২০-২৫টি গ্রামের মানুষ যেন ধুঁকে ধুঁকে কাটাচ্ছেন প্রতিটি দিন।

গত তিন দিন ধরে চলা অস্বাভাবিক গরমে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। একদিকে কাজের ধকল, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ। একমাত্র ভরসা পাহাড়ের নিচে থাকা ঘোলা ছড়ার পানি কিংবা অগভীর গর্তে জমা পানি, যা চেহারাতেই বলে দিচ্ছে—নিরাপদ নয়।

রোববার দুর্গাপুরের বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটার মৌসুমে মাঠে নামা শ্রমজীবী মানুষদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। মাঠের উত্তাপে ঘামে ভিজে একাকার তারা। একটু পরপর গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন এবং পানি খাচ্ছেন, তবে সেই পানির মান নিয়ে রয়েছে মারাত্মক শঙ্কা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন আয়রনযুক্ত, দুর্গন্ধময় পানিই পান করতে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ফান্দা, বারোমারি, গোপালপুর, ভরতপুর, ভবানীপুরসহ আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি পাওয়া যায় না। কারণ, পাহাড়ি অঞ্চলের নিচে রয়েছে পাথরের স্তর, যা গভীর নলকূপ বা পাম্প বসানোকে করে তোলে ব্যয়বহুল ও জটিল। এমন বাস্তবতায় স্থানীয়ভাবে বসানো রিং টিউবওয়েলও হয়ে পড়ে প্রায় অকেজো, কারণ তাতে পাওয়া যায় লৌহযুক্ত দূষিত পানি।

ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা বিনীতা সাংমা বলেন, এই গরমে বিশুদ্ধ পানি পাওয়াটা যেন যুদ্ধের মতো। প্রতিদিন কয়েকবার পাহাড় বেয়ে নিচে নামি, সেখানে গর্তের পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। আমার বয়স হয়েছে, শরীর আর ততটা সারে না। কিন্তু বিকল্প কিছু নেই।

অন্যদিকে পবনতারই গ্রামের কৃষক মিহির হাজং বলেন, ধান কাটতে নেমেছিলাম সকালে, কিন্তু অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ টিকতে পারিনি। পানি খেয়েই থাকছি, কিন্তু জানি না সেটা খাওয়ার উপযুক্ত কিনা। পরিবারে সবাই গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং বলেন, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিয়ে বহুবার কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো টেকসই সমাধান হয়নি। ফলে মানুষজন বাধ্য হচ্ছে দূষিত পানি ব্যবহার করতে, আর এতে সব সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী আমান উল্লাহ জানান, পাহাড়ি এলাকাগুলোর পানির সংকট নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অবগত। আমরা এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ