আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে জাবি শিক্ষার্থীদের

জাবি
জাবি   © সংগৃহীত

দুদফা জ্বালানী মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশব্যাপী অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রভাবে ব্যয় বেড়ে গেলেও না বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জাহানারা ইমাম হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মওলানা ভাসানী হল, আ ফ ম কামাল উদ্দীন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়। 

শিক্ষার্থীরা জানান ডাইনিংয়ে খাবারের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও খাবারের মান ও পরিমাণ কমে গেছে। ক্যান্টিনগুলোতে দাম বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বশেষ ডিমের মূল্যবৃদ্ধি তাদেরকে আরো বিপাকে ফেলেছে। এতে যাতায়াত সহ একজন শিক্ষার্থীর ব্যয় প্রায় ২৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আয়ের উৎস টিউশন হলেও টিউশন থেকে প্রাপ্ত বেতন বৃদ্ধি না পাওয়ায় কেউ বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এবং যাদের সম্ভব হচ্ছে না তারা তিনবেলার জায়গায় দুবেলা খাচ্ছেন। 

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লুবাইনা ফাইয়াজ বলেন,আগে মুরগির মাংস বাটি প্রতি ছিল ২০ টাকা আর এখন তা ২৫ টাকা। বিগত মাসগুলোতে খাবার খরচ বাবদ স্বাভাবিকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকাতেই হয়ে যেত, সেখানে এখন প্রয়োজন ৩৫০০ টাকারও বেশি। যাতায়াত সহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হচ্ছে। 

ইংরেজি বিভাগে পড়ুয়া ৩য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের চেয়ে ক্যান্টিনে প্রতিটি খাবারে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি এবং যাতায়াত ব্যয় বৃদ্ধির ফলে আগের থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার টাকা বেশি লাগছে। কিন্তু আমাদের টিউশন ফি বা বাবার বেতন কোনটিই বাড়েনি। আমি বাসা থেকে অর্থ নিতে পারলেও আমার অনেক বন্ধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করছেন কিন্তু কাউকে বলতে পারছেন না।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে পড়ুয়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামীম পাঠক বলেন, ডাইনিংয়ে খাবারের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও খাবারের মান কমেছে। আগে ২৫ টাকায় দুপুরে ছিল মুরগীর মাংস আর ডিম, রাতে মাছের সাথে ডিম। এখন গত কয়েকদিন থেকে মুরগীর মাংস থাকছে না। সার্বিকভাবে ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু এটা নিয়ে কোন আলাপ হচ্ছে না।

সজীব তালুকদার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী যিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পূর্বে সকালের খাবার খেতাম ১৫-২০ টাকার মধ্যে এখন সেটা গিয়ে দাঁড়িতেছে ২৫-৩০ টাকায়। বটতলায় দুপুরের খাবারে খরচ হতো ৫০-৫৫ টাকা। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৬৫-৭০। এটা মাঝারি ধরনের খাবারের মানের ক্ষেত্রে। এভাবে রাতের খাবারের বেলায়ও একই ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, এক কথায় খাবারের খরচসহ ক্যাম্পাসে থাকার ব্যয় আমাদের পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জন্য অনেক সময় সকালের খাবার না খেয়ে দুপুর আর রাতের খাবার খেয়েই থাকতে হয়। কারণ পরিবার থেকে যা পাই তার সমন্বয় করতে হচ্ছে এভাবেই৷ আমার ব্যক্তিগত হিসাবে মতে, পূর্বের চেয়ে বর্তমানে শুধু খাবারের বেলায় অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১৮০০ টাকা৷ যা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে উঠা শিক্ষার্থীর জন্য অনেক কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার।

চলতি দামে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ থাকলেও হোটেল মালিকদের দাবি চলতি দামেই তাদের চলছে না। তাদের অভিযোগ, যেখানে সবকিছুর দাম শুধু বেড়েই চলেছে সেখানে প্রায় ৩-৪ মাস আগে মূল্যতালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগমনও তূলনামূলক কমেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এসব খাবারের অন্যতম ক্রেতা হওয়ায় বাহিরের ক্রেতা ছাড়া কারো কাছে যথাযথ লাভ রেখে বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচু বটতলার জোবায়ের বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী শামীম মিয়া বলেন, দোকানে আগে প্রতিপিস মুরগীর মাংস ছিল ৪০ টাকা, যা এখন বাড়িয়ে ৫০ টাকাতে বিক্রি করা হয় । ডিম আগে ১৫ টাকা, এখন ২০ টাকা। আর মাছের দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। বাজারে মূল্যের চরম ঊর্ধগতির জন্য নিরুপায় হয়ে এই মূল্য বাড়াতে হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ফার্স্ট নয়, আত্মহত্যা করা হলিক্রস ছাত্রী ৩২তম ছিলেন

এ ব্যাপারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহেল কাফি জানান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ডাইনিংয়ের খাবার মান বৃদ্ধি ও দাম কমানো যেতো।

তিনি বলেন, আমি আমার হলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি খাবারের মান ঠিক রাখতে। যদি কোন শিক্ষার্থী বাজার করে তাহলে ওইদিন ওই শিক্ষার্থী বিনামূল্যে খাবার খেতে পারবে। এটা করা হয়েছে যাতে খাবারের মান ঠিক থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে মূল্যহ্রাস ও মানবৃদ্ধি দুটোই করা যেতো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কয়েকদিন আগে আমাদের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়েছে। এখন আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন উপাচার্য আসবেন। যেই আসুক তাঁর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে একটি সমাধান বের করা। 


সর্বশেষ সংবাদ