রাবি ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন, টাকা কেড়ে নিল ছাত্রলীগ নেতা 

অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা
অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে  ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী ছাত্র সামছুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। নারায়ণগর জেলার এ শিক্ষার্থীর পিতার নাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। 

অভিযুক্ত ছাত্র ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিং-এর কাজ করে পরিবার চালানো এবং ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা ব্যয়ভার বহন করেন তিনি। শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে তাকে রুমে ডেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায় ৩ ঘন্টা আটকে রেখে ভুক্তভোগীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতাসহ আরো কয়েকজন। এসময় তার কাছে থাকা বিভিন্ন জনের মোবাইল সার্ভিসিং-এর প্রায় ২০ হাজার টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া এসব কথা সাংবাদিক কিংবা পুলিশকে জানালে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে বলে ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থীকে হুমকি দেয়া হয়।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সামছুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার খুব অসহায়। সেজন্য হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারের দেখাশোনা করি। কিন্তু এ সার্ভিসিং কাজ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করে এবং আমি ৫ হাজার টাকা দিতে চাই। 

এ শিক্ষার্থী বলেন, ৫ হাজার টাকা হবে না বলে রুমে ডেকে নিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এমতাবস্থায়  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অভিযোগ পত্র প্রদানের  পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা দাবি করেন এ শিক্ষার্থী।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বলেন, কারো ইন্ধনে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি কারো নিকট চাঁদা দাবি করিনি। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করিনি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এ ছাত্রলীগ নেতা। 

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। কোন শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে আপাতত মেডিকেলে পাঠিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ পত্রটি হস্তান্তর করেছি। তাছাড়া কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ উপদেষ্টা। 

এবিষয়ে মতবহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রকে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকবটর অফিস থেকে জেনেছি৷ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন

এদিকে রাত সাড়ে ১১টায় ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ইলেক্টনিক্স এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন- সহকারী প্রক্টরদ্বয় ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহুরুল আনিস। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে  অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান প্রক্টর। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence