জাবিতে ‘রাতারাতি’ রেজিস্ট্রার নিয়োগের চেষ্টা 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তড়িঘড়ি করে এবং নিয়ম না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ চেষ্টাকে রাতারাতি নিয়োগের চেষ্টা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

সমকাল পত্রিকায় গত বছরের ৫ জুন প্রকাশিত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত  বিজ্ঞপ্তি থেকে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টোর) তাজনাহার বেগম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ( উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি-২) ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ( কাউন্সিল) বি এম কামরুজ্জামান। এদের মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমান মুকুল আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত হজের জন্য ছুটিতে রয়েছেন।

তবে এতদিন এ পদে নিয়োগ নিয়ে মাথাব্যথা না থাকলেও গতকাল রাতে হঠাৎ করে নিয়োগ প্রার্থীদের ফোন করে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার নিয়োগের লক্ষ্যে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত থাকার কথা বলেন আরেক নিয়োগ প্রার্থী বি এম কামরুজ্জামান। নিজে প্রার্থী হয়ে অন্য প্রার্থীদের নোটিশ পাঠাতে পারেন কি না এ নিয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। 

কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্টের প্রথম স্ট্যাটিউটসের ২২ ধারা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ৮ সদস্যের একটি নিয়োগ বোর্ড গঠন করতে হয় যার প্রধান হন উপাচার্য। এই বোর্ডে উপাচার্য ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল থেকে মনোনীত ২ জন সদস্য, সিন্ডিকেট থেকে মনোনীত ২ জন সদস্য, আচার্য কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য ও উপাচার্যের মনোনীত এক জন সদস্য থাকেন।

নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সিন্ডিকেট মনোনীত  সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের  অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম। 

তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও অধ্যাপক আবুল কালাম এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। এ নিয়ে জানতে অনেক চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট শাখার প্রধান ও প্রার্থী বি এম কামরুজ্জামান এর বক্তব্য জানা যায়নি। 

কতদিন আগে একাডেমিক কাউন্সিলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে?  জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি বোর্ডের মেম্বার। আসলে কতদিন আগে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা মনে নেই। করোনা শুরুর আগে কি  না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, হতে পারে। তা আমি বলতে পারছি না। আর  মাত্র ৩ দিন পর আমার এলপিআর শুরু হচ্ছে। 

প্রার্থী নিজেই চিঠি ইস্যু করা এবং ২৪ ঘন্টার ও কম সময়ে বোর্ড আহ্বান করা নিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমার নিয়মকানুন জানা নেই। কাগজপত্র দেখতে হবে। আর আমরা যখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ডে যাই তখন তো মিনিমাম ৭ দিন আগে জানায়। তবে তিনি মনে করেন মেয়াদ শেষে এক ঘন্টা আগেও এটা করতে বাধা নেই।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বোর্ড সদস্য বলেন, গতকাল রাতে একটি চিঠি আসলো আজ বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য বোর্ড বসবে। এভাবে ২৪ ঘন্টার ও কম নোটিশে রেজিস্ট্রারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগের বোর্ড আহ্বান কোনভাবেও ঠিক না। একটি বোর্ড আহ্বান করতে গেলে কমপক্ষে ৭ দিন আগে জানানো হয়। সেখানে হঠাৎ করে রাতারাতি নিয়োগ চেষ্টা কেন তা বোধগম্য নয়।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এটাতো অনিয়ম। এভাবে নিয়োগ চেষ্টা এটাকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এত ভারপ্রাপ্ত, অনিয়মিত ও অনির্বাচিতভাবে  আসীন পদসমূহে নিয়মিত নিয়োগের চেষ্টা মনে করি না এবং আমার কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রার্থী নিজেই চিঠি ইস্যু করে থাকলে যদি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের সৃষ্টি হয়, আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা না করে বরং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রেজিস্ট্রার সহ সকল পদে নিয়মিত নিয়োগের ব্যবস্থা করবে।

এ নিয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকেও একাধিকবার কল করে বক্তব্য জানা যায়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কেন নিয়োগ হলো না এ নিয়ে জানতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে একাধিকবার কল করও বক্তব্য জানা যায়নি। 

সার্বিক ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের  চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, এটি কিভাবে সম্ভব বুঝতে পারছি না যে আগেররাতে প্রার্থীদের জানিয়ে পরেরদিন ইন্টারভিউ বোর্ড আহ্বান করা হয়। আবার যিনি প্রার্থী তিনিই অন্যান্য প্রার্থীদের চিঠি ইস্যু করেন। যেহেতু এখানে আচার্যের দুজন প্রতিনিধি থাকবে, ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখবে।  এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ মিয়া প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতে একটি মিটিংয়ে থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি। 


সর্বশেষ সংবাদ