৭টি সরকারি চাকরি পেয়েও আত্মহত্যা ঢাবি ছাত্রের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ মে ২০২২, ০৬:২০ PM , আপডেট: ০৭ জুন ২০২২, ১০:৪১ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের আত্মহত্যার ঘটনা অবাক করেছে অনেককেই। গতকাল রবিবার (২৯ মে) বিকেলে রাজধানীর বাসায় বিষণ্ণতায় ভুগে আত্মহত্যা করেন তিনি। অথচ মৃত্যুর আগে তিনি কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহকারী পরিচালক হিসেবে।
বর্তমান যুগে যা অনেক তরুণের কাছেই স্বপ্নের মতো। শুধু তাই নয় জীবতকালে ৭টি স্থানে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবু তাকে ঝেঁকে ধরে বিষণ্ণতা। সহকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে মেহেদী নিদ্রাহীনতায় পার করেছেন রাতের পর রাত। তার লেখা শেষ নোটটিতে লেখা ছিল, নিদ্রাহীনতা আর সহ্য করতে পারতেছিনা।
প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন মেহেদী হাসান। তিনি একাধারে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-এর সহকারী পরিচালক, সহকারী সমাজসেবা অফিসার, বঙ্গবন্ধু হাটেক পার্কে অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর, রুপালী ব্যাংককে সিনিয়ার অফিসার, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) জুনিয়ার অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে জেনারেল ম্যানেজার পোস্টে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি বিএসইসির সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এত মেধা আর সাফল্য যার ঝুঁলিতে তাকে কেন গ্রাস করল বিষণ্ণতায়? কেন বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ? ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে সেই তথ্যই উঠে এসেছে।
সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তার একজন সহকর্মী নুসরাত নওশিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে জানান, মা-বাবা দুইজনকে হারিয়ে ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলেন মেহেদী। দুই ভাই থাকা সত্ত্বেও একা মেসে থাকতেন তিনি৷ শেষ ২-৩ মাস রাতে এক ফোঁটা ঘুমাননি তিনি। অনেক কাউন্সেলিং, ডাক্তার, সাইকোলজিস্ট দেখিয়েও অবস্থার উন্নতি হয়নি তার।
একাধিক সহকর্মী ও সহপাঠীর সূত্রে জানা যায়, মেহেদী করোনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে ধানমন্ডিতে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতেন। তিনি প্রায় এক বছর ধরে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না। এক বছর আগে তার মা মারা যায়। তারপর থেকেই কেমন যেন হয়ে যান তিনি। বাবা মারা যায় তার অনেক আগেই।
মেহেদীর মৃত্যুর বিষয়ে তার বড় ভাইয়ের বন্ধু গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী বলেছেন, মেহেদী অফিস শেষে স্কয়ার হাসপাতালের পেছনে মেসে আত্মহত্যা করেন। সে মা মারা যাওয়ার আগে থেকে হতাশায় ছিল। ঘুমাতে পারত না। এ কারণে তাকে একমাস আগে মোহাম্মদপুরে ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আজকে কাউকে না জানিয়ে সে মেসে গিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি পরে মেস থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হলের মেহেদীর সাবেক রুমমেট মো. ইমরান মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাই করোনার মহামারীর আগে হল ছেড়ে দেন। হল ছেড়ে দিয়ে ধানমন্ডিতে থাকতেন। এর পাশাপাশি একটা জব করতেন। তিনি অনেকদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন। ঘুমাতে পারতেন না। এটা আমাকে অনেকেই বলতো।
মেহেদীর মৃত্যুতে তার সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মেহেদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু হলের তার বড় ভাইয়ের রুমমেট সৈয়দ মোরাদ আলী তার ফেসবুক লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু হলের প্রিয় ছোট ভাই, ফিন্যান্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র মেহেদী আজ সুইসাইড করেছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছে ওর আত্মা আমার আশে পাশে ঘুরছে। কত কথা বলতে চেয়েছিল আমার সাথে। অকৃতজ্ঞ এই আমি সেই সময়টা দিতে পারিনি।
তিনি লিখেন, মেহদীর বড় ভাই মনোয়ার আমার দীর্ঘদিনের রুমমেট হবার কারণে ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। ওর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই, আমাকে সবসময় প্রেইজ করত। আমার বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময় আমার সাথে প্রতিদিন কেন্দ্রে গিয়েছে। আমি ঢাকায় আছি জানলেই ছুটে আসত দেখা করতে। ৪০তম বিসিএসে আমার দায়িত্বরত কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিল। প্রায় বছর খানেক ধরে ভয়াবহ ডিপ্রেশনে ভুগছিল সে, কিছুতেই ঘুমাতে পারতো না। বেশ কয়েকটা চাকরিও পেয়েছিল।
উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষার্থী অবস্থায় থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়।