জানাজা হলেও জিয়ার কফিনে লাশ ছিল না: কাদের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১০:২৫ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১, ১০:২৫ PM
বহু মানুষ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাযা পড়লেও সেদিন কফিনে জিয়ার লাশ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, হাজার হাজার লোক জানাজা পড়া আর কফিনে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা, না থাকা কি এক কথা? মানুষ তো নিহত প্রেসিডেন্টের জন্য জানাজা পড়তে এসেছিল, সেই কফিনে যে প্রেসিডেন্টের লাশ নেই এটা তো মানুষ জানে না। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেন। ফয়সাল মসজিদের সামনে ইসলামাবাদে এর চেয়েও বেশি মানুষ হয়েছিল। কিন্তু ওই কফিনেও জিয়াউল হকের লাশ ছিল না, এই কফিনেও জিয়াউর রহমানের মরদেহ ছিল না। এটাই হলো সত্য।
শনিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
১৫ আগস্টের পর জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকারীকে কে আশ্রয় দিয়েছে? কে প্রশ্রয় দিয়েছে? কে নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে? কে নির্বাসন করেছে? কে পুরষ্কৃত করেছে? পলাশীর কুম্ভকার মীর জাফর। বাংলার কুম্ভকার খন্দকার মোশতাক। পলাশীর সেনাপতি ইয়ার লতিফ বাংলাদেশের সেনাপতি জিয়াউর রহমান। পুরষ্কার, নির্বাসন, আইনি বৈধতা, এই কাজটি কে করেছে। এটা করেছে জেনারেল জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনী কিভাবে অস্বীকার করবেন মির্জা ফখরুল। নিরাপদে খুনিরা বিদেশে গেল, কে পাঠাল? এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন। বিভিন্ন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি এই খুনিরা, এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন।’
‘খন্দকার মোশতাকের চীপ অব আর্মি স্টাফ হয়ে গেলেন সঙ্গে সঙ্গে, এটা কিভাবে অস্বীকার করবেন? জয় বাংলাকে নিষিদ্ধ করল কে? ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হল, কে করল? এই সব অপকর্মের হোতা কে? ইতিহাসের সত্যে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’
আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা অন্য দেশের নয়, বরং এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব মডেল।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতাদর্শ সম্পূর্ণ আলাদা একটি মডেল। এটি বাংলাদেশ এবং বাঙালির মডেল। ধর্মীয় মূল্যবোধ সেটির প্রতিও বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা, সেইসাথে অন্য ধর্ম মতকে বিকশিত করা এবং সকল ধর্মের প্রতি একটি সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রেখে সেই মূল্যবোধকে বিকাশ ঘটানো।’
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রটা না চাইনিজ না রাশিয়ান। সমাজে সম্পদের ডিস্ট্রিবিউশন কীভাবে করা হবে সে ব্যবস্থাটা অন্য দেশের মতো হতে পারে না। এটিও দেশীয়, যা মানুষের মাঝে বড় আকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে না। কিন্তু মানুষ তার ইচ্ছায় গ্রহণ করবে, গণমানুষ উপকৃত হবে। এরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বঙ্গবন্ধু তার দর্শনগুলো ভেবেছিলেন।
উপাচার্য বলেন, আগে বলা যেতো, এই লোক জামায়াত করে, এই লোক শিবির৷ এখন কিন্তু কন্টেক্সট ভিন্ন! এখন তো অনেক দলই নেই। কিন্তু মানুষগুলো তো আছে। তাই আগের দৃষ্টিভঙ্গিতে এখন বিচার করলে চলবে না। এখন আমাদের অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, পাকিস্তানপন্থি বা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে এখন সংগঠন দিয়ে আইডেন্টফাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কে স্বাধীনতা বিরোধী, কে পাকিস্তানপন্থি, কে সাম্প্রদায়িক শক্তির অংশ—তা নির্ণয় করতে নতুন মাত্রার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। আমাদের, আপনাদের নতুন মাত্রায় ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর অবস্থান খুবই সুদৃঢ়। তার শক্তি হলো বঙ্গবন্ধুর নীতিদর্শন। বঙ্গবন্ধুর সেই নীতিদর্শন বর্তমানে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাস্তবায়ন করছে তখন বিশ্বকে হতচকিত করছে।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. আবু মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং মহাসচিব জনাব রঞ্জন কর্মকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এ. কে. এম. আফজালুর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।
সেমিনারে ওয়েবিনার যুক্ত এবং স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত জীবনসদস্যবৃন্দ।
সেমিনারের শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সকল শহীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পার্ঘ অর্পন এবং শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।