করোনায় পার্কে পরিণত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- বেলাল হোসেন, জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৪৯ PM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০৮:০৬ PM
করোনার কারণে সাত মাস ধরে বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সংক্রমণরোধে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ফলে ভোগান্তিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। অথচ এ করোনায়ও থেমে নেই ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক পর্যটন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে ক্যাম্পাসের দৃশ্য দেখে যে কারোর মনে হবে জাহাঙ্গীরনগর যেন একখন্ড সবুজ পার্ক।
স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে দর্শনার্থীদের আগমনে বিচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনের দাবি, অনেকেই শিক্ষার্থীদের নামে ভুয়া পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে দর্শনার্থীরা। সামাজিক দূরত্বের কোন বিধিনিষেধও মানছেন না তাঁরা। অথচ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধিসমূহ ফেস্টুন ও পোস্টারিং করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দর্শনার্থীদের বেশীরভাগই সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলের গার্মেন্টসকর্মী ও কারখানার শ্রমিক। এছাড়াও অনেক বহিরাগত নিজেদেরকে ক্যাম্পাসের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়ে পরিবারসহ ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া এলাকায় দেখা যায়, সারি সারি মটরসাইকেল পার্ক করে রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা অমর একুশের পাদদেশে, মুক্তমঞ্চে ও সপ্তম ছায়ামঞ্চে ছবি তোলায় ব্যস্ত। অন্যদিকে শহীদ মিনারের পাদদেশ ও নতুন কলা ভবনের সামনে দু’শর অধিক দর্শনার্থীর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
আবজাল নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। শুক্রবারের ছুটির দিনে বান্ধবীকে নিয়ে এখানে প্রায় ঘুরতে আসি। এই ক্যাম্পাস অনেক সবুজ ও সুন্দর তাই এখানে আসি।’
মাস্ক পরেননি কেন? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো করোনার তেমন প্রকোপ নেই তাই সবসময় মাস্ক পরি না। এছাড়া এখানকার সজীব বাতাসে মাস্ক পড়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। তবে আমার কাছে মাস্ক রয়েছে।’
নিজেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থী দাবি করা পরিবারসহ এক দর্শনার্থী বলেন, ‘ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছি। করোনার কারণে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। আবার দূরের কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়। তাই ঢাকা থেকে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসেই চলে আসি।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা সবাই মাস্ক পরেই এসেছিলাম। গাড়ি থেকে নেমে এখন মাস্ক খুলেই চলাফেরা করছি।’
দর্শনার্থীদের ভীড়ের বিষয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে তো ক্লাস পরীক্ষা নেওয়াই যেতো। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা ছাড়াই বাইরের মানুষ কীভাবে ক্যাম্পাসে আসে বুঝে আসে না। এখানে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে থাকেন। দর্শনার্থীরা এভাবে ভিড় জমালে তাঁরা তো নিরাপদ বোধ করবেনা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ সেলের প্রধান অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করা আমাদের কাজ। আমরা সেটা করেছি। অলরেডি ক্যাম্পাসে মাস্ক পরিধান ছাড়াই চলাচলে জরিমনার আদেশ জারি করেছে প্রশাসন। কিন্তু এর পরেও বাইরের মানুষজন, বিশেষ করে স্থানীয়রা চলাফেরা করছে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাইরে থেকে আরো দর্শনার্থী আসছে যা আমাদের ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের জীবনই অনিরাপদ করে তুলছে।’
বিধিমালা লঙ্ঘনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কনিজ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করে কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেয়। তবে অনেকেই সেক্ষেত্রে গার্ডদের সাথে মারমুখী আচারণ করে। ফলে জরিমানা আদায় সম্ভব হয়না। অনেকেই আবার ভূয়াঁ পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করছে। সমস্যাটি নিয়ে আমরা শাঁখের করাতে (উভয় সংকটে) আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ-উল-হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে প্রক্টরিয়াল বডির অনুমতি নিতে হতো। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আশেপাশে অবস্থান করায় বহিরাগতরা শিক্ষার্থী পরিচয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে এবং আমাদের অনুমতি নিতে চাই না।
তিনি বলেন, আবার অনেক গেট দিয়ে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে অনেকেই গার্ডদের সাথে অমানবিক আচারণ করছে যেটা দুঃখজনক। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলে এ সমস্যা দূরকরণে সুবিধা হবে। তাহলে আমরা বহিরাগত সহজেই চিহ্নিত করতে পারবো। এবং শুক্রবারে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হবেনা।