জাবি ক্যাম্পাস: কুয়াশার চাদরে নির্জনতার আবরণ

জাবি ক্যাম্পাস: কুয়াশার চাদরে নির্জনতার আবরণ
জাবি ক্যাম্পাস: কুয়াশার চাদরে নির্জনতার আবরণ  © টিডিসি ফটো

শীতের আগমন সব বয়সী কবিদের মনেই তারুণ্যের ঢেউ তোলে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ শীত-কুয়াশা। বর্তমান করোনা মহামারিতে লাল ইমারতের নগরে নির্জনতার অসুর ভর করেছে। সন্ধ্যা নামলেই ক্যাম্পাসের প্রকৃতিতে গা ছম ছম পরিবেশ। যেন জাহাঙ্গীরনগরেও ভর করেছে বিশ্বের সামগ্রিক সংকট।

তবে ক্যাম্পাসে শীতের যে বর্ণিল আগমনী রূপ তাতে একটুও ছেদ পড়েনি। পরিবেশের সাথে তাল মেলাতে কুয়াশা নেমেছে হেমন্তের প্রারম্ভেই। শীত আসছে তা বোঝা যায় গোধূলীর সোনালী সূর্য অস্ত যেতেই মাঝারি কুয়াশার চাদরে আকড়ে ধরা প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর রূপে।

নির্জন সবুজের এই জগতটি যেন ঢাকা শহরের চিরচেনা যান্ত্রিকতা ও ধুলোবালি থেকে বিচ্ছিন্ন। সকালের হিম অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে সবুজে আবৃত লাল দালানগুলি। দূরের দিকে তাকালে ঘন কুয়াশায় দীর্ঘ চাদর। দৃষ্টিরেখার সীমাবদ্ধতা এ আবরণকে ভেদ করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সবুজ পাতাজুড়ে হিমের পরশ। অস্তিত্বে শুধু কুয়াশার চাদরে আবৃত প্রকৃতির অফুরন্ত মায়া। গালিচা বিছানো সবুজ সমারোহ ঘন কুয়াশার আবরণে ঘোলাটে হয়ে শুভ্রতার রঙ ধারণ করছে। তা ভেদ করে সুর্যের জ্যোতি ছড়াতে প্রলম্বিত হয় বেলা। অল্পদিনের মধ্যেই কনকনে ঠাণ্ডা গ্রাস করে ফেলবে সংস্কৃতির রাজধানীকে।

সাধারণত সবুজের নৈস্যর্গিক সমারোহ ঘেরা এ ক্যাম্পাসে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে ভিন্ন কিছু মুগ্ধতা ও অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এবারের ভিন্নতা নির্জনতায় ও একাকিত্বে। করোনায় শীত বরণ করতে গড়হাজির ক্যাম্পাসের পিঠার দোকানগুলো। সাংস্কিৃতিক উৎসবের ব্যস্ততা নেই জহির রায়হান মিলনায়তন, টিএসসি কিংবা মুক্তমঞ্চে। ছুটোছুটি নেই জলসিঁড়ি, থিয়েটার, আনন্দন, ধ্বনি, গীতনাট, জুডো, জাডস প্রভৃতি সংগঠন গুলোর স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মীদের।

সপ্তাহান্তে দুইদিন (রবিবার ও বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসে। প্রধানত হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতেই আসছে তাঁরা। তবে কাজের কারণে আসলেও অনেকেই ক্যাম্পাসের নির্জন সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন। দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি দশা থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে প্রিয় ক্যাম্পাস ভ্রমণে আসছে অনেক ছাত্রছাত্রী। নিজ ক্যাম্পাসের অপিরিচিত দৃশ্য দেখে অনেকের নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয়। মনের কোনে উঁকি দেয় আবার কবে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে ‘সেন্ট্রাল ফিল্ড’-এ খেলতে পারবো।

ক্যাফেটেরিয়া চত্বরের শিক্ষার্থী ছাউনিতে নিঃসঙ্গ হয়ে বসে ছিলো দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানালেন, কয়েকদিন পূর্বে এসেছেন প্রয়োজনীয় কাজে। কাজ সমাপ্ত করে আবারো ফিরবেন পাবনার স্ব-নিবাসে। কিন্তু মধ্য হেমন্তের কুয়াশাচ্ছন্ন ক্যাম্পাস মায়াজালে আবদ্ধ করেছে তাকে।

কথা শেষে স্বাভাবিক সময়ের কামনায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইলো কুয়াশাচ্ছন্ন কেন্দ্রীয় মাঠের দিকে।

‘বৃক্ষের পদতলে জীর্ণ পত্রের অশেষ উৎসব
বাতাসে কিসের গন্ধ
কাদের সংগীত
একদিন ঘুম ভেঙে দেখি
এসে গেছে শীত।’

হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগরের প্রকৃতিতে সত্যিই এসে গেছে শীত। তবে কবির কল্পনার মতো এতো সহজেই আসেনি শীত। নির্জনতার আবরণে এক অভূতপূর্ব শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হেমন্তের মাঝামাঝিতে হাজির হয়েছে কুয়াশার চাদর। চাদরের মধ্যমণি হয়ে ধরিত্রীর সর্বোচ্চ শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিষন্নতার প্রতীক হয়ে। যেন আহবান করছে দূর সাইবেরিয়ার অতিথি পাখিদের। সেই আহবান হয়তো পৌঁছে গেছে পাখিদের সমাজে। সাড়া দিতে এখানে আসার আয়োজনও শুরু করেছে কি তাঁরা?


সর্বশেষ সংবাদ