ভালবাসা ভালবাসে ভালবাসাকে ভালবাসতে
- তাওসিফুল ইসলাম, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৩:১৮ PM , আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১, ০২:৫৩ PM
কেউ লাল, কেউ নীল, কেউ বা হিমু সেজে হলুদ পাঞ্জাবি পরেই এসেছে। শার্ট কিংবা টি-শার্টের চেয়ে পাঞ্জাবিতে বেশি রঙিন হয়েছে সব ভালবাসার মানুষেরা। আবার মেয়েদের শাড়ি পরতে বেশি দেখা যাচ্ছে। কপালে টিপ, মাথায় খোঁপা, অনেকে কানে গুঁজে দিয়েছে গোলাপ। সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন এক রঙিন উৎসবে মেতে উঠেছে।
ভালোবাসতে কোনো দিন লাগে না। তবু সবাই একটি বিশেষ দিন চায়, যেদিন শুধুই ভালোবাসার মানুষটির জন্য বরাদ্দ থাকবে। তার হাতে হাত রেখে কল্পলোকে স্বপ্নের ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়াবে অনন্তকাল ভেবে।
আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এমনই বিশেষ দিন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এই দিবসের সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস হয়ে ওঠেছে ভালোবাসার রঙে রঙিন। প্রত্যয়ের প্রকাশে ফুল বিনিময় আর হাতে হাত রেখে চলতে চলতে পথও যেন গান ধরছিল। বিকেল গড়াতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, মলচত্বর, সবুজ চত্বর, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এলাকা, হাকিম চত্বর, টিএসসি, কার্জন হল সর্বত্র উৎসব-আড্ডার আমেজ বিরাজ করে।
ক্যাম্পাস ঘিরে ছিল, প্রেমিকার লাল রঙের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে হাত ভর্তি লাল চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ। সেই রিনিঝিনি ছন্দ যেন আন্দোলিত করছে লাল অথবা সফেদ পাঞ্জাবি পরা প্রেমিকদের হৃদয়। অনেককে আবার মিষ্টান্ন বানিয়ে আনতেও দেখা যায়। প্রেমিক খাচ্ছে আর প্রেমিকা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। প্রেমের গল্প-আড্ডায় সেলফিও বাদ যাবে কেন?
অনেককে দেখা গেলো খানিকটা আড্ডা দিয়ে প্রিয়জনের হাত ধরে বইমেলায় ঘুরতে। বইও উপহার দেওয়াও যে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ তা এখানেই ফুটে উঠেছে।
দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বরের সামনে ফুল বিক্রি করতে দেখা গেলো ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের। শুধু যে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে তা না। কিছু শিক্ষার্থীও ফুল বিক্রির মাধ্যমে ভালবাসা ছড়াতে চান। সেরকম এক ছাত্র অপূর্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাই আমরা শুধু দুইটা বুথ বসিয়েছে। অনেক আগেই আসল উঠে গিয়েছে। অনেক পরিচিত ভাইয়া আর আপুরাও আসছে। তাদের থেকে বেশিই টাকা নিয়েছি। সব মিলিয়ে ঈদ ঈদ লাগছে।
তবে ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা প্রকাশ যেন বৃত্ত ভেঙে মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও হয় সে প্রত্যাশাও দেখালেন অনেকে। অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বপরিবারে ঘুরতে দেখা গেছে।
আবার, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সঙ্গীতের আবহ রঙ। অপরাজেয় বাংলার সামনে ঐতিহাসিক বটতলায় হচ্ছে সমগীত বসন্ত উৎসব ১৪২৬। সুন্দরবন রক্ষার জন্য গান গেয়ে উৎসাহ জাগাচ্ছেন তারা৷ অন্যদিকে গানের সুরে মেতে উঠেছে শত শত ভক্তরা। কার্জনেও কনসার্ট চলছে।
কিছু রোমান্টিক মুহুর্তে দেখা যায়, টিপটা ঠিক কপালের মাঝে পরেনি। ঠিক করে দিচ্ছেন প্রেমিক। আবার শাড়ির গোছা টেনে সমান করে দিতেও দেখা গেছে। উষ্কখুষ্ক চুল নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে ছেলেটা। মেয়েটা চুল ঠিক করে দিচ্ছে।
এক যুগল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সব দিনই আমাদের জন্য বিশেষ। তারপরেও এই দিনের মাঝে একটা আনুষ্ঠানিকতা আছে। এই দিনে সব প্রেম ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। জানা যায়, ছেলেটা সিলেট থেকে ঢাবি পড়ুয়া প্রেমিকার সাথে দেখা করতে এসেছে।
আবার পুঁজিবাদী প্রেমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করছেন সিঙ্গেল কমিটি। তাদের বক্তব্য হলো একটা ছেলে বা একটা মেয়ে একাধিক জনের সাথে প্রেম কেন করবে? সে কারনেই অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। এখন ডিএসএলার থাকলেই প্রেম করা যায়। কেন? প্রেম করতে হবে মন দেখে। এক সংগ্রামী সিঙ্গেল সিদ্দিক ফারুক বলেন, আমার কাছে প্রেম সবসময় পবিত্র। ভালবাসা এক অন্য জগৎ। এই দিনে অন্তত ভালবাসার সঠিক বন্টন হোক। পুঁজিবাদী প্রেমকে না বলে পবিত্র প্রেমকে হ্যা বলুন।