ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণ
ডাকসুতে ২৫ শতাংশ রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ‘চোখ এড়িয়ে’ গেল মেটার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১০ AM , আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত মোট বিজ্ঞাপনের এক-চতুর্থাংশকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম দুটির মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। স্বচ্ছতা ও তথ্য যাচাই সংস্থা ডিসমিসল্যাবের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেটার ‘অ্যাড লাইব্রেরি’-তে থাকা মোট ২৩১টি বিজ্ঞাপন তারা বিশ্লেষণ করেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক হলেও সেগুলোকে মেটা সে হিসেবে শনাক্ত করেনি। ফলে এসব বিজ্ঞাপন কোনো স্বচ্ছতার তথ্য ছাড়াই চালানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৬৬ শতাংশ বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ডিসক্লেইমার তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে ৯ শতাংশ বিজ্ঞাপন স্বচ্ছতার তথ্য না থাকায় মেটা সরিয়ে দিয়েছে।
ডিসমিসল্যাব জানায়, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে ডিসক্লেইমার থাকা বাধ্যতামূলক। এতে বিজ্ঞাপনদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ওয়েবসাইট ও ই–মেইল প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একই ধরনের ভাষায় দেওয়া বিজ্ঞাপনগুলোর কিছু শনাক্ত হয়েছে, আবার কিছু হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুটি বিজ্ঞাপন ডিসক্লেইমার না থাকায় সরিয়ে নেওয়া হলেও ছাত্রদল–সমর্থিত এক প্রার্থীর পাঁচটি বিজ্ঞাপন ডিসক্লেইমার ছাড়াই চলেছে। একইভাবে, এক সদস্য পদপ্রার্থীর একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেওয়া হলেও একই ধরনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তার অন্য তিনটি বিজ্ঞাপন ভোটের দিন পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভোট গণনা চলছে প্রথাগত পদ্ধতিতে, সাড়ে ১৫ ঘণ্টায় শেষ হলো ১১ হল
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ৭৬টি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ৪৯টি, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের পক্ষে ৩৫টি, অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪ প্যানেলের পক্ষে ২১টি এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষে ১৪টি বিজ্ঞাপন চলেছে।
মোট ১৪৯টি বিজ্ঞাপন প্রার্থীরা সরাসরি দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সমর্থক পেজ থেকেও বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। যেমন—‘আমাদের ডাকসু’ থেকে ২১টি, ‘আমার ডাকসু’ থেকে ১১টি এবং ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ থেকে ৯টি। ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষে ‘কিশোরকণ্ঠ ২.০’ পেজ থেকে প্রচারিত হয়েছে ৪টি বিজ্ঞাপন।
ডিসমিসল্যাব বলছে, মেটা যখন কোনো বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন বিজ্ঞাপনদাতাকে বাড়তি শর্ত পূরণ করতে হয়—যেমন অনুমোদন প্রক্রিয়া পেরোনো, ‘পেইড ফর বাই’ ডিসক্লেইমার প্রদর্শন করা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারে সীমাবদ্ধতা মেনে চলা। এতে বিজ্ঞাপনের প্রভাব কমে যায়। কিন্তু যেসব বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত হয় না, সেগুলো সহজেই বাধাহীনভাবে অনেক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়।
এ বিষয়ে সংস্থাটির মন্তব্য, মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণে এই দুর্বলতা নতুন নয়। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আরেকটি গবেষণাতেও একই ধরনের সমস্যা ধরা পড়েছিল। তখনও মেটা অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, আবার অনেক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।