বিএনপিপন্থী উপাচার্য কি দলের স্বার্থবিরোধী কাজ করলেন, প্রশ্ন জাবি অধ্যাপকের

ছাত্রদলের জাকসু নির্বাচন বর্জন

ড. আবু দায়েন
ড. আবু দায়েন  © ফেসবুক থেকে নেওয়া

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলের বর্জন নিয়ে ধন্দ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু দায়েন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ছাত্রদল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়, যা তার কাছে বিস্ময়কর লেগেছে।

ড. আবু দায়েন লিখেছেন, ছাত্রদল ও চারটি বাম সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। বামদের বর্জনের বিষয়ে কিছু বলার নেই। ছাত্রদলের বর্জনের বিষয়ে ধন্দে পড়েছি। ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে বোধ হয় ভোট দেওয়ার সময় ফুরানোর ১০ মিনিট আগে। অনিয়মের অভিযোগগুলোও দেখলাম। নির্বাচনে কারসাজি করার অভিযোগ আসলে কার বিরুদ্ধে? ফেসবুকে একজনের পোস্টে চারটা নাম দেখলাম। তারা চারজন সম্ভবত চারটি হলের প্রভোস্ট। একজন নারী শিক্ষকও রয়েছেন তন্মধ্যে। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। বাকিদের মধ্যে দুজন বিগত আমলে আওয়ামিপন্থী শিক্ষক ফোরামে সক্রিয় ছিলেন। অপরজনকে চিরকাল বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে জেনে এসেছি, অন্তত গত ৩৩ বছর ধরে। বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির মনোনয়নে তিনি সিনেট, সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা যদি প্রভোস্ট হয়ে থাকেন, চারটি ভোটকেন্দ্র তাঁদের চারজনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা।

আরও পড়ুন: ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া; প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে শিশু তারেক, শিশু আরাফাত’ : জাবি উপাচার্য

ড. আবু দায়েন আরও লিখেছেন, ‘যার অধীনে তাঁরা (প্রভোস্ট) কাজ করেন, সেই উপাচার্যকে বিএনপির কোর অর্গানাইজার হিসেবে চিনি ৩৩ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী তিনি অফুরন্ত ক্ষমতার মালিক। তাঁর টিমে যারা আছেন, দুজন উপ-উপাচার্যের একজন সামাজিকভাবে জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত (সত্যি কি না আমার ধারণা নেই)। অপরজন চাকরিতে যোগ দেন বিএনপি আমলে। বিএনপির ফ্রন্টলাইনার সাপোর্টার ছিলেন। আওয়ামি আমলে পরিচিতি বদলান। দীর্ঘ সময় প্রভাবশালী আওয়ামি শিক্ষক ছিলেন। ট্রেজারার বগুড়ার গাবতলির সন্তান। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত হল প্রতিনিধি। প্রক্টরসহ নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন, প্রায় সবাই বিএনপি ঘরানার ত্যাগী ও বিরূপ পরিস্থিতিতে নানাভাবে নিগৃহীত শিক্ষক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনৈতিক প্রশ্নে বিভিন্ন সময় সরব অবস্থানে থাকলেও তার রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই। ডাকসু নির্বাচনে অভিযোগের কেন্দ্রে উপাচার্য, যার জামায়াতপন্থী হওয়ার জোর আলোচনা লক্ষ করা যায়। জাকসুতে বিএনপিপন্থী উপাচার্য ও প্রশাসনের সর্বত্র প্রায় সব দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বিএনপি সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও কে কারচুপি ও অনিয়ম করল? বিশেষত মাথার ওপর যেখানে উপাচার্য। তাঁর নেতৃত্ব বাইপাস করে অনিয়ম ও কারসাজি হলো? তিনি মেনে নিলেন বা হতে দিলেন? অভিযোগ নিয়ে তিনি চুপ থাকবেন? প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানে তো তাঁর বিরুদ্ধেই অনিয়মের আঙুল তোলা। তিনি বিএনপির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছেন? সেটা মানা কঠিন নয়? তবে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? একটা আচানক ধন্দে পড়ে গেছি।’

তিনি লিখেছেন, “ভোট শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রদল বর্জন ঘোষণা দিল। যদি বর্জনকারীরা হঠাৎ জিতে যায়, তবে কী হবে? যাকে-ই জিজ্ঞেস করি, সবাই বলে—জিতবে না। কিন্তু সবাই এত নিশ্চিত হলো কীভাবে?”

শেষে তিনি উল্লেখ করেন, “আসলে এখনকার দিনকাল ভালো নয়। হঠাৎ করেই এক ধরনের ধন্দের মধ্যে পড়ে গেছি।”


সর্বশেষ সংবাদ