চবিতে কর্মচারী নিয়োগে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের দ্বৈত নীতি, চলছে আলোচনা-সমালোচনা
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৫ PM , আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৮ AM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ও বিভিন্ন অনিয়ম তুলে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’। যদিও এই সংগঠনের সদস্যরাই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগের বিভিন্ন সিলেকশন বোর্ডের সদস্য। তাদের এমন দ্বৈত নীতি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাহেদুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্রে বিষয়টি জানানো হয়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, চবির বর্তমান প্রশাসনের নিয়োগ উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং যোগ্যপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুতগতিতে বন্ধের দিনেও একাধিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ফোরামটি।
ফোরামের সহ-সভাপতি অধ্যাপক তৈয়ব চৌধুরী, যিনি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী ও মেথর কাম ঝাড়ুদার পদের নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রশ্ন তৈরি, খাতা মূল্যায়ন ও ভাইভা বোর্ডে ছিলাম। স্বচ্ছভাবেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো অনিয়ম এবং পক্ষপাতিত্ব দেখিনি। দলের পক্ষ থেকে পত্রপত্রিকার তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযোগ করা হয়েছে। তবে দিনে ২-৩টি করে প্রক্রিয়া চালানো স্বাভাবিক নয়, সেটিই উপাচার্যকে আমরা জানিয়েছি।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদের বোর্ড সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছি, কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা দলীয়করণ ছিল না। এক্ষেত্রে কোনো যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছে বলে আমি মনে করছি না।
শাহ আমানত হলের কমন রুম বিয়ারার, প্রহরী(১টি), ভোজনালয় সহকারী (১টি), সরকারি বাবুর্চি(১টি), ঝাড়ুদার (১টি), অর্ডালি পিয়ন (১টি) পদের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান বলেন, এই পদ গুলোর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক চাপ বা অস্বচ্ছতা ছিলনা। অধিকাংশ পদ গুলোতেই আগে থেকেই অনেকেই কাজ করতো তাদেরকেই নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দ্বারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিবেচনা করা যাবে না।
অতীশ দীপঙ্কর হলের কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক পদের বোর্ড সদস্য এ.জি.এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, যেহেতু এখনো সিন্ডিকেটে নিয়োগ চূড়ান্ত হয়নি, তাই মন্তব্য করাটা সময়োপযোগী নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চবির এক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বোর্ড এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা থাকার পরেও তাদের এই অভিযোগ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, বর্তমান উপাচার্য নির্দলীয় হওয়াতে এবং গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে ছাত্রসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সামাজিক নজরদারির চাপে উনারা ইচ্ছামতো দলীয় লোক নিয়োগ দিতে পারছেন না। ফলে উনারা (বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা) চান না এই প্রশাসনের অধীনে নিয়োগ হোক। উনারা ভাবছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে পরিবেশ উনাদের অনুকূলে চলে আসবে। তখন নিজেদের পছন্দমতো উপাচার্য এনে ইচ্ছেমতো নিয়োগ দেওয়া যাবে। এজন্য এসব অস্বাভাবিক অভিযোগ তুলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে চান।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, এটাকে অভিযোগপত্র বললে ভুল হবে। আমরা শুধু উপাচার্য মহোদয়কে বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত করেছি। আমরা অনিয়মের বিষয়গুলো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কোথায় হয়েছে তা বলা সম্ভব না। উপাচার্য যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক তাই বিষয়গুলো আমরা উপাচার্যকে মৌখিক ও লিখিত জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে এগিয়ে যাক। বিষয়গুলো গণমাধ্যমে দেখার উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, এটা অভিযোগপত্র নয়।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। বোর্ডের সকলের সম্মতিক্রমে যোগ্যতার ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও নিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে যারা অনেকদিন ধরে কাজ করে আসছিল তাদেরকে রেগুলারাইজ করা হয়েছে।