ঢাবি থেকে একসাথে পাস করে বের হলেন সেই মা-ছেলে

ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে মা জুলিয়া আইরিন এবং ছেলে মুকসেতুল ইসলাম আলিফ
ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে মা জুলিয়া আইরিন এবং ছেলে মুকসেতুল ইসলাম আলিফ  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ থেকে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করে এবার একসাথে পাস করে বের হলেন সেই বহুল আলোচিত মা ও ছেলে। মা জুলিয়া আইরিন ৩.৩৭ সিজিপিএ এবং ছেলে মুকসেতুল ইসলাম আলিফ ৩.৭৮ সিজিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

জানা গেছে, এর আগে মা জুলিয়া ও ছেলে আলিফ দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা দুটি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে একসঙ্গে একই বিভাগে ভর্তি হয়ে বেশ আলোচনায় আসেন তারা। আলিফ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) করেছেন। তার মা জুলিয়া আইরিন ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।

ছেলে আলিফের জন্মের সময় মা আইরিন পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথম বর্ষে। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আর সন্তান জন্মের প্রস্তুতি চলছিল তার সমানতালেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পরই প্রথম সন্তানের মুখ দেখেন আইরিন।

তাদের দুইজনের সাফল্য প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের সামাজিক যে বাস্তবতা সেই বাস্তবতায় তাদের (মা-ছেলে) মাস্টার্সে ভর্তি হওয়াও ছিল চ্যালেঞ্জিং। একসময় সন্তানকে পেটে ধারণ করে মা যখন মাস্টার্স করতে পারেনি সেই মা তারই পাশাপাশি বেঞ্চে বসে দুইজন একসাথে মাস্টার্স শেষ করা, এটা এক ধরনের অনুপ্রেরণার গল্প হতে পারে। আমাদের দেশে তো ওইভাবে আমরা মায়েদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারছি না। সেই পরিস্থিতিতে তাদের এমন উদাহরণ অনেক মায়েদের এবং সন্তানদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নিজের অগ্রযাত্রায় যেকোনো বাঁধাকে অতিক্রম করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা- এমন কর্মের মাধ্যমেই আসলে মানুষ বেঁচে থাকে। আর সেই কর্মটাই মা আর সন্তান করেছেন বলে আমি মনে করি। 

আরও পড়ুন: ৪৪ বিতর্কিত আমলাকে অপসারণে জুলাই ঐক্যের ফের আল্টিমেটাম

মা-ছেলের একসাথে শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা বা ক্লাসের পরিবেশ কেমন থাকতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কথা বলতে আমাকে নস্টালজিক হতে হচ্ছে। আমার কখনও কখনও মনে হচ্ছে যে, আমি তাদের মা-ছেলে হিসেবে ট্রিট করি। আবার মনে হতো যে, না ক্লাসরুমে সমানভাবে ট্রিটেড হওয়া দরকার। ক্লাসেতো আমি শিক্ষার্থী হিসেবে ট্রিট করবো। এই জায়গাটাতে একটা ইমোশন কাজ করতো। মা-ছেলে ক্লাসে পাশাপাশি কখনও বসতো না। কিন্তু আমার চোখে ভাসতো যে, মা-ছেলে একসাথে বসে আছে। এই বিষয়টি আমাকে আবেগতাড়িত করত। এটা সত্যি যে, জুলিয়া আইরিন দীর্ঘদিন কোর্টে প্র্যাকটিস করেছেন। সেই প্রেক্ষাপট থেকে এসে যখন তিনি ক্লাসরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যেতেন, তখন তার মধ্যে কোনো শ্রেণিভেদের মনোভাব বা মানসিকতা আমি কখনও দেখতে পাইনি। কখনও মনে হয়নি তিনি নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই জায়গাটাতে মা-ছেলে দুজনের ব্যক্তিত্বের প্রশংসা আমি করবো। ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেই তারা কাজ করতেন। এই বিষয়গুলো চোখে পড়ার মতো ছিল। অন্য মায়েদের আমি বলবো, এরকম ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে স্থায়ী কিছু অর্জন হয়। যে অর্জনটা এই মা-ছেলে করেছে বলে মনে করছি।  

উল্লেখ্য, জুলিয়া আইরিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। প্রায় দেড় যুগ ধরে এ পেশায় যুক্ত রয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০৮ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। এছাড়া, জুলিয়ার স্বামী মিজানুল ঢাকার একটি স্কুলের ক্রীড়া বিভাগের প্রধান। তার মেয়ে তাসনিম বিনতে ইসলাম শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিভাগে স্নাতকে অধ্যয়নরত।


সর্বশেষ সংবাদ