৪৪ বিতর্কিত আমলাকে অপসারণে জুলাই ঐক্যের ফের আল্টিমেটাম
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৬:১৪ PM , আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:১৫ AM
নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ৪৪ জন বিতর্কিত আমলাকে অপসারণ না করায় ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করেছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’। এ কর্মসূচি পালনের এক পর্যায়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করে দাবি আদায়ে ফের ১৬ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে প্লাটফর্মটি। সংগঠনটির দাবি, এই আমলারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দোসর এবং প্রশাসনে 'স্বৈরাচারী প্রভাব' বহন করছেন।
আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে শাহবাগ থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি শুরু করে জুলাই ঐক্যের সংগঠকেরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ের সামনে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় মার্চ টু সচিবালয়ের মিছিল। এ সময় পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শিক্ষা ভবনের সামনে গেলে ফের বাধার মুখে পরে জুলাই ঐক্য। এ সময় ছাত্রজনতাকে নিয়ে সচিবালয়ের রাস্তার মুখে অবস্থান নেয় জুলাই ঐক্য। পরে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে সচিবালয়ে প্রবেশ করে জুলাই ঐক্যের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্লাটফর্মটির অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, এবি জুবায়ের, প্লাবন তারিক, ইসরাফিল ফরাজী ও বোরহান মাহমুদ।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে সচিব বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন সচিবকে বদলি করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। সচিবদের অপসারণের বিষয়টি দেখে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি। যেখানে ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও রয়েছেন।
বৈঠক চলাকালে সাতক্ষীরা জেলায় ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় বুলডোজার চালানো সাবেক ডিসি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব নাজমুল আহসানের বিষয়টি নিয়ে জুলাই ঐক্যের প্রতিনিধিগণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে দৃষ্ট আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে তাদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য। তাহলে আশা করা যায় এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: হিজাবধারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় শনাক্তে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাবি ও ঢামেক প্রশাসন
জুলাই ঐক্য সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে বৈঠকের শেষ পর্যায়ে আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে প্লাটফর্মটির প্রতিনিধিরা তার নিকট সচিব নাজমুল আহসানসহ ৪৪ স্বৈরাচারের দোসর সচিবের তথ্য তুলে দেন। এতে তারা আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এর আগে, গত সোমবার (২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনগুলোর এই জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের অন্যতম সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী। তিনি আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বর থেকে সচিবালয়ের উদ্দেশে মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরুর কথা জানান।
জুলাই ঐক্যের অভিযোগ, ২০ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা যে-সব আমলাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপসারণের দাবি জানিয়েছিল, তাদের বিষয়ে সরকার নির্ধারিত ৩১ মে পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং, তারা বলছে, কিছু আমলা সংস্কারমূলক আইনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন, যা জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি।
সংগঠনটির দাবি, এই অবস্থান সরকার ব্যবস্থার মধ্যে একটি ‘সিভিল ক্যু’ বা প্রশাসনিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার অংশ। তারা মনে করে, এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতের কৌশলগত প্রভাব। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে ‘ভারতীয় প্রক্সি’ আখ্যায়িত করে, তাঁর ঘনিষ্ঠ আমলাদের সচিবালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করারও দাবি জানানো হয়েছে।
জুলাই ঐক্য বলছে, জনগণের বিপ্লবী স্পিরিট যদি এই প্রশাসনিক বাধায় থমকে যায়, তবে তা হবে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা। তাদের ভাষায়, ‘বাতিল পুরনোদের সরিয়ে নতুন সময়ের উপযোগী প্রশাসন গড়তেই এই মিছিল।’ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিতে ছাত্র, যুবক ও সাধারণ মানুষকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছে, এই কর্মসূচি কেবল প্রতিবাদের নয়, বরং ‘জুলাই বিপ্লব’কে রক্ষা এবং এগিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।