২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল নয়, সংসদে আইন পাশেই সমাধান খুঁজছে কোটা আন্দোলকারীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন  © টিডিসি ফটো

২০১৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫ বছর। কিন্তু চলতি বছরের জুন মাসে হাইকোর্ট কর্তৃক জারিকৃত একটি রায়কে ঘিরে ঘটে বিপত্তি। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কয়েকজনের করা আপিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এতে করে সরকারি চাকরি পুনরায় চালু হয় ৫৬ শতাংশ কোটা।

হাইকোর্টের রায়ের সাথে সাথে বিক্ষোভে ফেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ জুন রায় হওয়ার পরেই ওইদিন বিকেলেই বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন থেকে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। গঠন করা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। গত রবিবার ও গতকাল সোমবার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অচল করে দিয়েছেন আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীরা। একইসাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন তারা। এদিকে আজ মঙ্গলবার তাদের আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন অফলাইন গণসংযোগ করে আগামীকাল বুধবার সারা দেশের ৬৪টি জেলাই অবরোধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৫ জুনের পর থেকে আন্দোলন চললেও এতদিন ছিল না কোনো সমন্বয়ক কমিটি যার কারণে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কে বা কারা অর্থাৎ কাদের সাথে আলোচনা করা যায় সে ব্যাপারে ছিল সন্দেহ। গতকাল সোমবার এই সমস্যারও সমাধান করে আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা একটি সমন্বয়ক কমিটি নামসহ প্রকাশ করে। যেখানে ৬৫ জন সমন্বয়ন ও সহ-সমন্বয়কের নাম প্রকাশ করে তারা।

গত রবিবার তাদের একটি ঘোষণায় তারা বলেন, শুরুতে চার দফা দাবি নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করলেও এখন থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলন হবে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দফা দাবির ব্যাখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় স্পষ্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কারীরা। 

সমন্বয়করা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুরুতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল, কমিশন গঠন করে করে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেওয়াসহ ৪ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করেছেন। সেখানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি তথা ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের কথা ছিল। তবে এখন আর ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল মূলকথা নয়। বরং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীসহ সকল গ্রেডে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন তারা।

আন্দোলনকারীদের সমন্বয়কদের মতে, তারা প্রথমে হাইকোর্টের রায়ের আশা করলেও এখন তারা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান যেটা সরকারের নির্বাহী বিভাগে করতে পারে। তাদের দাবি সকল গ্রেডে অযৌক্তিক সকল কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাশ করার মাধ্যমে কোটা সংস্কার করতে হবে।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলন করছি তা কোটা বাতিলের আন্দোলন নয়। বরং বাস্তবতার সাথে সমন্বয় রেখে কোটার যৌক্তিক সংস্কার আন্দোলন।এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধিতা কি না-আমরা একাধিকবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিত নয়। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশকে যে ধারণ করে সে কখনো মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের প্রশ্নে আঙুল তুলতে পারে না। যারা আঙুল তোলে, তাদেরকে আমরা বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলিনি। সরকার যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা আরও বিস্তৃত করতে চায়, আমরা তা স্বাগত জানাব। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের যে কোটা দেওয়া হয়েছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি।

কত শতাংশ কোটা গ্রহণযোগ্য?
কত শতাংশ হবে, এ নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোটাতে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় এ বিষয়ে আমরা শিক্ষক, নীতিনির্ধারক, আইনজ্ঞদের সাথে কথা বলেছি। গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ ও টিভি-টকশো পর্যালোচনা করেছি। আমরা দেখেছি কোটা কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে হতে পারে। এই তিন ক্ষেত্র ছাড়া বাকি কোটাকে আমরা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করছি।

তিনি বলেন, কোটা কত শতাংশ হতে পারে, তা নিয়ে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেছি। আমরা মনে করছি ৫ শতাংশ কোটা ন্যূনতম এবং যৌক্তিক পর্যায়। সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে সেখানে মেধাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অর্থাৎ (সরকারি চাকরিতে) ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।

২০১৮ সালের পরিপত্রও পুনরায় চান না আন্দোলনকারীরা
এদিকে ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল সাদী ভূইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। কিন্তু এই রিটের সাথে আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসাথে আদালত থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলেও এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।

আন্দোলনের সমম্বয়কারী আসিফ মাহমুদ বলেন, দুজন শিক্ষার্থী যে রিট করেছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তাদের আদালতে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তারা ব্যক্তিগতভাবে এই রিট করেছেন। এর সাথে আমাদের (বৈষম্যবিরোধী) ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আরেক সমম্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আদালত যদি বুধবার পরিপত্র বহালও করে, তবুও আমাদের দাবি আদায় হচ্ছে না। আমরা সকল গ্রেডের চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। ফলে মহামান্য হাইকোর্টের শুনানি থেকে আমাদের দাবি পূরণ সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা এতদিন ১ম ও ২য় শ্রেণিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে বৈষম্য আরও বেশি। ২০১৮ সালের পরিপত্রে সমস্যা ছিল বলেই হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে এখন এটিকে বহাল করা হলেও ভবিষ্যতে যে পুনরায় অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তাই আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। এটা হতে পারে কমিশন গঠন করার পরিপত্র। যদি লিখিত কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়, তাহলে আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশের ৬৪টি জেলায় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে সমন্বয়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হবেন শিক্ষার্থীরা। এক দফা দাবির ভিত্তিতেই বাংলা ব্লকেড শীর্ষক আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence