শিক্ষক-ছাত্র ও কর্মকর্তাদের আন্দোলনে অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৮ AM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৫০ AM
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এছাড়া ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (০২ জুলাই) সকাল নয়টা থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এমনকি অনলাইনেও ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকেরা। পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও বন্ধ রাখা হয়। যদিও পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গ্রন্থাগার খুলে দিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন। তবে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় সেবা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভূক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন করা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি হলো- অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ চালুর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা।
আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরি করতে চায়। প্রজ্ঞাপন ঘোষিত হওয়ার পরপরই আমরা তথাকথিত সর্বজনীন প্রত্যয় স্কিমকে প্রত্যাখ্যান করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তিনমাস সময় দিয়েছি, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করার কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেন নাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ, যা আমাদেরকে গভীরভাবে আহত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা ক্লাস-পরীক্ষা ও গবেষণায় ফিরে যেতে চাই।’
অফিসার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, ‘একই দেশে দুই ধরনের পেনশননীতি চলতে পারে না। সর্বজনীন পেনশন স্কিম অন্তর্ভুক্তের মাধ্যমে সরকার আমাদের উপর জুলুম করছেন। আমরা অনতিবিলম্বে নতুন পেনশন প্রথা বাতিল করে পূর্বের প্রথা বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
এদিকে বিকাল সাড়ে তিনটায় সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ২০ মিনিট প্রতীকী অবরোধ করে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কের উভয় লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও দেখছি সরকারী চাকুরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এই বৈষম্যের জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন? আগামী ৪ জুলাই যদি সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘দিনে দিনে সারা বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কিভাবে বেকারত্বেও সংখ্যা কমানো যায়, সেদিকে সরকারের চিন্তা নেই। উল্টো বৈষম্যমূলক কোটা প্রথার মাধ্যমে বেকারত্বের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করার পায়তারা চলছে।’
অন্যদিকে আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবার বিকাল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘যেহেতু এটা জাতীয় ইস্যু। সেহেতু শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার পাশাপাশি মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি লক্ষ্য রাখার অনুরোধ করেছি।’