পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, রাবির হল ক্যান্টিন সিলগালা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ক্যান্টিন পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন ক্যান্টিনেরই এক নারী কর্মচারী। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে হল প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন ওই নারী। অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যান্টিনটি সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ।

অভিযুক্ত ক্যান্টিন পরিচালকের নাম হাফিজুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা মেহেরচন্ডীর বাসিন্দা তিনি। ২০১৩ সাল থেকে চুক্তিভিত্তিক এই ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এর আগে একই ক্যান্টিনে তার বড় ভাইয়ের অধীনে কাজ করেছেন তিনি।

হল প্রাধ্যক্ষ, ভুক্তভোগী কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত হাফিজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। দেড় বছর আগে আরেক নারী কর্মচারীকেও শারীরিকভাবে হেনস্তা ও লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। সেসময় তাকে সতর্ক করা হয়। আজ ফের ক্যান্টিনের এক নারী কর্মচারী তার বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ তুললেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যান্টিন সিলগালা করা হয়েছে। এতে তাদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় ক্যান্টিন সিলগালা করায় ডাইনিংয়ের জন্য ভোগান্তি কিছুটা হবে অবশ্যই। তবে বৃহৎ স্বার্থে এটা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এরপর ক্যান্টিনের দায়িত্ব যাকেই দেওয়া হোক না কেন, একটা ক্যান্টিনের বৈশিষ্ট্য যেন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

আরও পড়ুন: জাবিতে আরো ধর্ষণ হয়েছে, লজ্জায় চুপ থাকে অনেকে: র‌্যাব

এদিকে অভিযোগকারী ওই নারী কর্মচারী বলেন, ওই লোকের সঙ্গে আমার তিন বছরের সম্পর্ক। আমায় বিভিন্ন কথা বলে, আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে ব্যবহার করত। আজকে (শুক্রবার) দুপুর বেলা আমি কাজ করছিলাম ক্যান্টিনে, ওই লোক ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখন সে আবার আমার শ্লীলতাহানি করে।

এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাড়ায় আমার মানসম্মান আছে। একটা বড় ছেলে আছে। সবকিছু বিবেচনা করে আমি অভিযোগ করতে চাচ্ছি না।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্যান্টিন পরিচালক হাফিজুর রহমান। দাবি করেন, ওই মহিলা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে, তার সবই মিথ্যা। আমার ক্যান্টিনে ওই মহিলা বাদেও আরও একজন মহিলা কাজ করে। আজ সকালে জানতে পারি ওই মহিলা (অভিযোগকারী) চাল, ডাউল, মসলা ও তেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় আরেক মহিলা কর্মচারী তাকে ধরে ফেলে। তখন তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেসময় আমি উপস্থিত হয়ে ঝগড়া থামিয়ে দেই এবং ওই মহিলাকে বলি, আপনি চুরিও করবেন, আবার মারামারিও করবেন? তখন ওই মহিলা নিজের জামাকাপড় নিজে ছিড়ে শিক্ষার্থী ও প্রভোস্ট স্যারকে দেখাবে বলে আমাদের হুমকি দেয়।

অভিযোগকারীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজুর বলেন, ওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ওই মহিলা ক্যান্টিন থেকে চাল চুরি করে পেছনের দরজা দিয়ে পালাচ্ছিল। আমি দেখতে পেয়ে ওকে আটকাই (একবার বলেছেন আরেক মহিলা কর্মচারী আটকায়) এবং দুই তিনটা চড় মারি। তখন সে নিজেই কাপড় ছিঁড়ে বলে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দিবে। তারপর হল গেইটে এসে চেঁচামেচি শুরু করে।

আরও পড়ুন: তিন দিন আটকে রেখে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪

একাধিকবার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে মাস্টার্সে, ছোট ছেলে ইন্টারে পড়াশোনা করে। আমি এসব কাজ কেন করব? আমাকে নামানোর জন্য নাটক করছে উনি। এগুলো সব মিথ্যা।

এসব বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যান্টিন পরিচালক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্যান্টিনের একজন মহিলা কর্মচারী তাকে ধর্ষণ এবং মারধরের মৌখিক অভিযোগ করেছেন। ওই কর্মচারী (অভিযোগকারী) ক্যান্টিন থেকে বাহিরে এসে চিৎকার করতে থাকেন। তখন ছাত্ররা এগিয়ে আসলে ওই নারী জানান, হাফিজ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তখন ছাত্ররা হাফিজের প্রতি রাগান্বিত হয়। কিন্তু হাফিজ বলছে, ওই মহিলা চাল ও এক লিটার তেল চুরি করেছেন। উভয়পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

তখন ওই মহিলা অভিযোগ করেন, তিন বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ভাড়া বাসায় নিয়ে তাকে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে যখন হাফিজকে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন সে বিষয়টা অস্বীকার করে বলে, ওই মহিলা আজ চুরি করার সময় আরেক মহিলা দেখে ফেলে। সে আমাকে জানালে। আমি তাকে (অভিযোগকারী) জিজ্ঞাসা করি। তখন সে আমার সঙ্গে হাতাহাতি করে। এসময় সে বেঞ্চের উপরে পড়ে যায় এবং তার কাপড়টা ছিঁড়ে যায়—যোগ করেন প্রাধ্যক্ষ।

অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই আমরা হল প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যান্টিনটাকে বন্ধ ঘোষণা করছি। আর সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা সকালে ডাইনিং এ খাবারের ব্যবস্থা করব। এরপর তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ক্যান্টিন কেমনে পরিচালনা করা যায়, আমরা সে বিষয়ে জানাব। শিক্ষার্থীরা যে-রকম চাইবে, আমরা সেভাবেই কাজ করব। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আমরা সবসময় কাজ করে আসছি বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence