ঢাবির ইফতারে এক ছাদের নিচে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-বাম-পরিষদ

ইফতার অনুষ্ঠানে একই ছাদের নিচে শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলো
ইফতার অনুষ্ঠানে একই ছাদের নিচে শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলো  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অবস্থানরত বড় ছাত্রসংগঠনগুলোকে একই ছাদের নিচে আনা যেন আকাশ-কুসুম কল্পনা। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বাম ছাত্র সংগঠনগুলোকে একই ছাদের আওতায় এনে সেই কল্পনাকে প্রতিবছর বাস্তবে রূপ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট, ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ডুজা। আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, নীলদল-সাদাদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন নিয়ে ইফতার আয়োজনও করে ডুজা।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই: ঢাবি ভিসি

এসময় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন পরিবর্ধিত হয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক বক্তব্য শুনেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করে।

উপাচার্য বলেন, সুন্দর পরিবেশ পেলে আমরা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি। তবে এই দায়িত্ব প্রশাসন বা কোনো ছাত্রসংগঠনের একার নয়। এতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করবে। আর লাইব্রেরি সংস্কার, আবাসন সংকট সমাধানের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি— মাস্টারপ্লানের কাজ শুরু হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র পাল্টে দিতে পারবো এবং শিক্ষার্থীদের অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবো।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলকে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে: কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আজকের ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছেন। যারা সরকারের বিরুদ্ধে আছেন তারা এক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন আবার যারা সরকারের পক্ষে আছেন তারা আরেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা আলাদা করে আলোচনা করতে হবে, কোন ইফতার মাহফিলে নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বে যে সরকার চলছে সে সরকারের অনেক বিষয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে আমরা আলোচনা করে সরকারকে জানাই। 

সভাপতির বক্তব্যে ডুজা সভাপতি আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য বা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ্য করি না। তবে আজকে ডুজার আয়োজনে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি। আমরা সাংবাদিক সমিতি চাই— ক্যাম্পাসে সবসময়ই রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক এবং শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ পাক।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকারও।ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাস ভায়োলেন্স কমিয়ে আনা সম্ভব। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টারপ্ল্যান দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু ১ জুলাই

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আজকে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাছাড়া হলগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা হোক।

ডুজার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহীর সঞ্চালনায়  ও সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন লেখক, বিশ্লেষক ও ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ অনুষ্ঠানে- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল এবং বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি (অন্য অংশ) দীপক শীল, সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ