যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে অব্যাহতি না দিলে ক্লাসে ফিরবে না ঢাবি শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে তার বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম বয়কট করেছেন বিভাগের  শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)  সকাল  থেকে  বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পোস্টার হাতে বিভাগের করিডোরে অবস্থান নেন তারা। এরপর সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপাচার্যের কার্যালয় হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ সমাবেশ করেন তারা।

গত শনিবার অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে  প্রক্টর বরাবর বিভাগের  এক নারী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রথমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বয়কট করার কথা জানান।এরপর সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান: অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা; যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা এবং তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ ও রোবায়েত ফেরদৌস পরে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে যাওয়ার কথা বলেন। কেবল আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া যাবে না জানিয়ে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান।

৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহি নায়াব বলেন,নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানির বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে ভাইরাল হলেও এটি তিনি আরও অনেক আগে থেকেই করে আসছিলেন। প্রতিটি ব্যাচেরই ২-৩ জন সুন্দরী নারী শিক্ষার্থীকে তিনি টার্গেট করে রাখতেন। এবং পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। প্রতি ব্যাচেই যদি দুই একজন শিক্ষার্থী থাকেন, তাহলে ২৩-২৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি কত নারী শিক্ষার্থীকে ইতিমধ্যে হয়রানি করে এসেছেন।  আজ দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আমাদের বোনদের সাথে যে যৌন নিপীড়ন হয়েছে, আমরা তার বিচার চাই।  তদন্ত কমিটি করার আশ্বাসে এবার আর কাজ হবে না। আমরা চাই সঠিক তদন্তের পর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাওয়ার সালসাবিল দুর্দানা বলেন, প্রথম সেমিস্টারেই আমরা তাকে পাই। এই পর্যন্ত তিনটা সেমিস্টারে তিনি আছেন। এটা বলার পরই আপনারা বুঝতে পারছেন আমরা কতটা বেশি মানসিক ট্রমায় ছিলাম। সেটাও হয়তো ক্ষমার যোগ্য কিন্তু প্রত্যেকটা ব্যাচ থেকেই তিনি কয়েকজনকে টার্গেট করেন এবং নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মেধা যাচাই করেন না, যাচাই করেন হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট এবং ফোনের আলাপ।যেকোনো টার্ম পেপার জমা দিতে হলে আমাকে তার পছন্দ হবে কি হবে না সেটা নিয়ে ২ঘন্টা ফোনে কথা বলতে হবে। পরবর্তীতে তিন বলবেন আমার কথা বলা কম হয়েছে তাই আমাকে তিনি ১০ এ দুই বা তিন দেবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন নিজেদের ঈশ্বর মনে না করেন এবং নাম্বার যেন মেধার ভিত্তিতে যাচাই হয়। 

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামদানি প্রত্যয় বলেন, ওনার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি সবাই জানতো। ভীতির সংস্কৃতি চর্চার কারণে এতোদিন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। একজন ভিক্টিম যখন সাহস করে প্রতিবাদ করেছে তখন আমরা চুপ থাকতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র অভিযোগের সাফাই গেয়ে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের দাবি স্পষ্ট, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অতি দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্ত কালীন সময়ে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যবহিত দিতে হবে। আমরা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।

২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা তাসনিম বলেন, উপাচার্যের সাথে আমাদের  কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা হয়েছে।উপাচার্য আমাদের  ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন। কিন্তু আবার যদি ফিরে গিয়ে সেই শিক্ষকেরই ক্লাসই করতে হয় তাহলে আমি এবং অন্যান্য নারী শিক্ষার্থীরা মনে মনে হয়রানির ভয়েই থাকবো। তাই আমি, আমরা নারী শিক্ষার্থীরা যারা এখানে রয়েছেন এবং সকল শিক্ষার্থী এর বিচার চাচ্ছি।যতক্ষণ  বিচার হচ্ছে না এবং নাদির জুনাইদকে বয়কট করা হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত  তাকে সকল ক্লাস নেওয়া থেকে অব্যহতি দিতে হবে।যতক্ষণ পর্যন্ত না এর বিচার হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরবো না এবং আমাদের আন্দোলন চলবে।

সার্বিক বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা  বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ বলেন, গতকাল প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আজ শনিবার শিক্ষার্থীরা আমাকে একটি স্মারকলিপি দেন৷ পরে বিষয়টি নিয়ে আমি ও বিভাগের দুজন শিক্ষক নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সভা করেছি৷ প্রক্টর সভায় উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য সেখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদেরও ডেকে নিয়েছেন৷ উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন যে এ বিষয়ে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence