‘দুই অধ্যপকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ ঢাবির স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করেছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দুই অধ্যপকের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা এবং নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এটি ঢাবির বিদ্যায়তনিক স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মন্তব্য করেছে সাদা দল কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি।

শুক্রবার (৫ মে) সাদা দলের পক্ষে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। একই সাথে এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ, তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও জোর প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন স্বনামধন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত পূর্বোক্ত শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ১৯৭৩ সালের ঢাবির আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা এবং নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক স্বায়ত্তশাসনকেও ক্ষুণ্ণ করেছে বলে সাদা দল মনে করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে একাডেমিক ডিসকোর্স হবে, থিসিস ও পাল্টা থিসিস উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়াস চালানো হবে এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু সাদা দল উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে যে, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ডিসকোর্স, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ঐতিহ্যকে নস্যাত করার অপ্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকার তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, অধিকতর শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও স্বায়ত্তশাসনকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অন্যায্য দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও স্বায়ত্তশাসন খর্ব হয় এমন সরকারি উদ্যোগ দৃঢ়তার সাথে সাথে মোকাবিলা করেছে। সরকারের আক্রোশের হাত থেকে শিক্ষকদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সবসময় সক্রিয় ও যৌক্তিক ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন বা শিক্ষক সমিতি সে দায়িত্বতো পালন করছেই না, বরং সরকারের কৃপা লাভের মাধ্যমে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে, এমনকি শিক্ষক সমাজের সাধারণ পেশাগত স্বার্থের পরিপন্থী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের অনুকম্পা লাভের জন্য সহকর্মীদের শাস্তি দেয়া নয়, বরং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক স্বাধীনতা অক্ষুন্ন ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব। এ দায়িত্ব এড়িয়ে বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতিসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক একাডেমিক ও মুক্তবুদ্ধিরচর্চার ঐতিহ্যকে নস্যাত না করার জন্য সাদা দল সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।"

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে-এমন অভিযোগে এলপিআরে থাকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিদানসহ ভবিষ্যতে যে কোনো একাডেমিক কাজে তাঁর যুক্ত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়। সিন্ডিকেটের একই সভায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করার মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর আমানুল্লাহ পাঠ্যপুস্তক, সরকারের শিক্ষানীতি ও ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন এমন অভিযোগ এনে ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও আচরণ করবেন না মর্মে লিখিত মুচলেকা দেয়ার শর্তে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence