পরিবারের খরচ মেটাতে ক্যাম্পাসে ব্যবসা করছেন রাবির শফি

ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবি বিক্রিতে ব্যস্ত রাবির শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা শফি আলম
ঈদ উপলক্ষে পাঞ্জাবি বিক্রিতে ব্যস্ত রাবির শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা শফি আলম  © টিডিসি ফটো

সামনে ঈদ-উল-ফিতর। মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঈদ উৎসবকে ঘিরে সবার ভেতরেই রয়েছে কেনাকাটার তাড়না। তবে সবার প্রয়োজনীয় পোশাক যদি হাতের নাগালেই পেয়ে যায়, তাহলে কেউবা চাইবে মার্কেটে গিয়ে দর কষাকষি করতে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেই মিলছে এমন সুলভ মূল্যে প্রয়োজনীয় পোশাক। যার ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিক্রেতা এক তরুণ উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরোলেই সামনে জোহা চত্বর। জোহা চত্বর থেকে পূর্বদিকে মিনিট খানেক হাঁটলেই দেখা মিলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন। ভবনের সামনে খোলা জায়গা। সেখানে বসেছে একটি অস্থায়ী কাপড়ের দোকান। দোকানটিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পোশাক। সেখান থেকে পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঈদকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে অস্থায়ী কাপড়ের দোকান দিয়েছেন শফি আলম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। শফি আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার পাখিওড়া গ্রামে।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটা লম্বা টেবিলের উপরে সাজানো রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির পোশাক। তন্মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, প্যান্ট ও শাড়ি। কেউ কেউ পাঞ্জাবি পায়জামা নিয়ে দেখছেন। কেউ দেখছেন প্যান্ট। আবার কেউ শাড়ি দেখছেন, কেউবা শার্ট পছন্দ করে দামদর করছেন। টেবিলের অন্য পাশে কেউ পাঞ্জাবি গোছাচ্ছেন। শফি টাকা পয়সা বুঝে নিচ্ছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে। তবে এতে শফিকে সহযোগিতা করছেন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা সবাই তার বন্ধু। দোকানটিতে সারাদিনের কেনাকাটা ঘিরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এ বিষয়ে কথা হয় শফি আলমের সাথে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দোকান বসিয়েছি। গতবছরও আমি দোকান বসিয়েছিলাম। সেবার ভাল সাড়া পেয়েছিলাম। যার কারণে এবারও দোকান দিয়েছি। গত ২৬ মার্চ থেকে দোকান চালু করেছি। ঈদের আগে ক্যাম্পাস যতদিন চালু থাকবে ততদিন দোকানও চালু রাখব। 

শফি বলেন, এই দোকান বসানোর পেছনে আমার বাস্তব জীবনের অনেক দুঃখ-কষ্ট জড়িত। আমার লেখাপড়ার শুরু থেকেই সংসারে টানাপোড়েন ছিল। বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। কাজ করতে পারেন না। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শফিই সবার ছোট। ভাইয়েরা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। কেউ বাবাকে খরচ বহনে সহযোগিতা করেনি। যার ফলে ভিন্ন কিছু করার তাড়না তার মধ্যে সবসময়ই ছিল।

ব্যবসা শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে তিনি লেখাপড়ে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাড়ি থেকে খুব বেশি টাকা দিতে পারতেন না। প্রাথমিক অবস্থায় নিজের খরচ চালাতে বেছে নেন টিউশনি। মোটামুটি ভালোই চলছিল। মাঝপথে শুরু হয় করোনাভাইরাস। ক্যাম্পাসও বন্ধ হয়ে যায়। টিউশনিও বন্ধ হয়ে যায়। তিনি খুব অর্থ সংকটের মধ্যে পড়ে যান। তখন রাজশাহীতে আমের মৌসুম চলছিল। তখন তিনি (শফি আলম) সিদ্ধান্ত নেন আমের ব্যবসা করবেন। তিনি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আম বিক্রি শুরু করেন। আমের মৌসুম শেষ হওয়াতে ব্যবসা শেষ হয়ে যায়। পরে আম বিক্রির গচ্ছিত টাকা দিয়ে তিনি গত রমযান মাসে ক্যাম্পাসে পোশাকের দোকান দেন। গত বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার পোশাক বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন শফি আলম।

এবার কেমন বিক্রি হতে পারে জিজ্ঞেস করলে শফি বলেন, গতবারের মতো এবারও খু্ব ভাল সাড়া পাচ্ছি। আমার এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই আসছেন পোশাক কেনার জন্য। অনেকেই পোশাক নিচ্ছেন। বেশ কিছু শিক্ষক আমাকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। যেটা খুবই ভাল লাগছে। গত ২৬ মার্চ তারা স্টল দিয়েছি। ইতোমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি টাকার কাপড় বিক্রি হয়েছে। ৭-৮ দিনে প্রায় ২০০ এর বেশি পাঞ্জাবি বিক্রি হয়েছে। আজকে আবার ৭৫ হাজার টাকার পোশাক কিনে নিয়ে এসেছি।

কোন পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে শফি জানান, টুকটাক সব ক্যাটাগরির পোশাকই বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি-পায়জামা এবং শার্ট। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পাঞ্জাবি কিনছেন ঈদের জন্য। আমিও যথাসম্ভব সীমিত লাভে পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। যার ফলে পাঞ্জাবির ক্রেতা বেশি হচ্ছে। 

ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, প্যান্ট, শার্টসহ প্রায় ১৯ ধরনের পোশাক নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন। মেয়েদের জন্য রয়েছে টাঙ্গাইলের শাড়ি। ২২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত দামের পোশাক রয়েছে তার কাছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি পোশাকের স্তর সাজিয়েছেন।

মেয়েদের ক্ষেত্রে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে সাড়া কম পাচ্ছি। কারণ মেয়েদের জন্য শুধু শাড়ি কালেকশন আছে। ৭-৮ দিনে মাত্র ৪টা শাড়ি বিক্রি করেছি। 

এই ব্যবসাকেই কি আপনার পেশা হিসেবে গ্রহণ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শফি বলেন, সবারই প্রাথমিকভাবে স্বপ্ন থাকে সরকারি চাকরির জন্য। তেমনি আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সবার মতো আমিও চাকরির পরীক্ষা দিব। যদি সরকারি চাকরি না হয়, সেক্ষেত্রে এই ব্যবসাটা আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাব। যেহেতু এ বিষয়ে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি। সেহেতু এটাকে কাজে লাগাবো।

নতুনদের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শফি বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেন তখন বিভিন্ন কাজে অনেক টাকা লাগে। এসময় বাসা থেকেও আর্থিক সাপোর্ট পাওয়া যায় না। এজন্য দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থীর উচিত টাকা ইনকাম করে জমানো। যাতে ভবিষ্যতে ভাল কোনও কাজে লাগানো যায়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়া বড় একটা সহায়ক হিসেবে কাজে করে। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence