ঢাবির নাটমন্ডলে মহুয়া সুন্দরীর মঞ্চায়ন
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৩৪ PM , আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৭ PM
মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে মহুয়া পালার মঞ্চায়ন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনী আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি সন্ধ্যা ৭টায় চলবে পালার প্রদর্শনী।
দ্বিজ কানাই রচিত ‘মহুয়া’ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাবি থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রথিতযশা মঞ্চ, টিভি ও চলচিত্র অভিনেতা রহমত আলী। প্রযোজনায় অভিনয় করছে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা।
নাটকটির নির্দেশক জানান, “মহুয়া পালা প্রযোজনাটি গীত-নৃত্য-বাদ্য সহযোগে আমাদের দেশজ পরিবেশনা শৈলী অনুসৃত এক নব্য সৃষ্টিকর্ম। দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকার একটি উল্লেখযোগ্য পালা মহুয়া।“
তিনি আরো বলেন, নির্দেশক হিসেবে গীতিনাট্য আমাকে সর্বদা প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। পূর্বে আমার নির্দেশিত খাকসারনামা, তাসের দেশ, স্বদেশী নকশা প্রযোজনাসমূহ ছিল সংগীতাশ্রয়ী। পালাটির সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে, পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক। রচয়িতা হিসেবে দ্বিজকানাইয়ের নাম পাওয়া যায়। আর রসের দিক থেকে এটি রোমান্টিক-ট্র্যাজেডি ঘরানার দৃশ্যকাব্য।
“এই কাব্যে কবি চিন্তা, ইতিবৃত্ত, চরিত্র, গীত সৃষ্টিতে অসম্প্রদায়িক মনস্তত্ত্ব ধারণ করেছেন।”
থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবেই এবার মঞ্চে এসেছে গবেষণাধর্মী এই নাটক 'মহুয়া'।মহুয়া পালায় প্রত্যন্ত বেদে শ্রেণি সমাজের যাযাবর জীবন বর্ণিত হয়েছে। ভাগ্য অন্বেষণে কখনো গভীর জঙ্গলে, কখনো উঁচু পাহাড় পর্বতে, কখনো বা নদী সাগরের পাড়ে অথবা গ্রামীণ লোকালয়ে বিচরণ করতে হয়েছে হুমরা বেদের দলকে। ঢোল বাদ্যধ্বনির সহযোগে দড়ির উপর মহুয়া নানা খেলা দেখাতো হুমরা বেদের শিক্ষায় ও নির্দেশে। কিন্তু বেদিয়া জীবনতন্ত্রে অপরূপ ফুলের মতো বেড়ে ওঠা ষোড়শী বেদে কন্যা মহুয়ার জীবনেও প্রেম আসে। বেদে কন্যা মহুয়া সাথে ব্রাহ্মণপুত্র নদ ঠাকুরের প্রেম হয়। প্রেম শ্বাশত অপরূপ এক অনুভূতির নাম। প্রেম কোন জাত-পাত, ধর্ম, শ্রেণি, গোত্র, বর্ণ, সমতা-অসমতার হিসাব কষে না। প্রেম নিষ্পাপ। প্রেম স্বর্গীয়, প্রেমের শক্তি অপ্রতিরোধ্য। তথাপি, পুরুষতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী, আত্মম্ভরি সমাজ নির্ধারিত আত্মসম্মানের মানদণ্ডে নারীর প্রেমকে বিচার করা হয় ভয়ানক অপরাধ হিসেবে। নর-নারীর প্রণয়কে অতি নগণ্য, অচ্ছুৎ, তুচ্ছ ও হেয় ব্যাখ্যা করে জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণের অজুহাত দেখিয়ে বিচ্ছেদের পাঁচিল নির্মাণ করা হয়। যুগে যুগে অহম নামক বিষলক্ষ্যার ছুরিতে হুমরাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয় বহু নদের চাঁদ-মহুয়া ও তাঁদের প্রেম। অথচ, প্রেম সৃষ্টির ফোয়ারায় শান্তির জলরাশি হতে চায়, প্রেম চায় মানবতার রঙিন আলপনা এঁকে দিয়ে পৃথিবী জুড়ে মানব-মানবীর প্রেমবিজড়িত সম্পর্ককে চিরন্তন ও মহিমান্বিত করতে। প্রেম হোক অনিন্দ্য এক অভিব্যক্তি যা কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, উগ্রতা, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি অপশক্তিকে রুখে দিয়ে একটি নৈর্ব্যক্তিক, স্বপ্নীল ও মানবিক পৃথিবী বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করবেন যেখানে সবার উপরে থাকবে মানুষ ও তাঁদের প্রেম।
‘মহুয়া’ পালায় অভিনয় করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ নাটকের তরুণ মেধাবী অভিনেতা হাবিবুর রহমান কাঞ্চনসহ, অনন্যা দে, বর্ণালী ঘোষ বর্ণ, ফৌজিয়া আফরিন তিলু, জাহেদ আল ফুয়াদ, মারিয়া সুলতানা, মো. ফরহাদ হোসেন ফাহিম,মো. মেজবাহুল ইসলাম জিম, মুনিরা মাহজাবিন, মুসাব্বির হুসাইন রিফাত, নীহারিকা নীরা, শান্তা আক্তার, শেখ রাহাতুল ইসলাম, শেখ মুমতারিণ অথৈ, তাহসিন নুর মিত্রিতা, টুম্পা রানী দাস, উম্মে হানী।
মঞ্চ অভিনেতা কাঞ্চন বলেন, মহুয়ার পান্ডুলিপি টি প্রায় চারশত বছরের পুরানো ও লৌকিক চরিত্রের উপস্থাপন। যা আমাদের লোক সমাজ কে তুলে ধরে প্রতিকীরূপে। চরিত্রায়নের জায়গা থেকে দেশজ চরিত্রসমুহে অভিনয় করা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর অভিনেতা হিসাবে চ্যালেঞ্জিং কাজ গুলোই আমাকে একটু বেশিই টানে।আমি এই নাটকে সুজন ও সাধু নামে দুইটা আলাদা চরিত্রে অভিনয় করছি।পাঠদানের জায়গা থেকে এই পরিবেশনা টি আমাদের একাডেমিক পরীক্ষাও বটে! তাই এটি আমার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রযোজনা বলে আমি মনে করি। তাছাড়া মঞ্চে খুব সম্ভবত রহমত স্যারের এটিই শেষ নির্দেশনা।তাই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান ও ভাবছি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনী শো অনুষ্ঠিত হয়ে মঞ্চায়নের পর প্রতি সন্ধ্যা ৭টায় টিকেটের বিনিময়ে দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ঢাবি নাটমণ্ডল।