বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতির রূপরেখা প্রকাশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ০৮:৫১ PM , আপডেট: ২৯ মে ২০২১, ১১:২৯ AM
কোভিড-১৯ এর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনলাইনে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নেওয়া সংক্রান্ত রূপরেখা প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটি সাত দফা সুপারিশ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করে পরীক্ষা নিতে পারবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলাকালে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতেই সরাসরি (ইন-পারসন) পরীক্ষাও নিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এ বিষয়ে পত্রও দিয়েছে।
গত ১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার জন্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগমকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটি গত ৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। গত ২৩ মে সেই রূপরেখাটি অনুমোদন করে মন্ত্রণালয়। ওই রূপরেখাটি গত ২৪ মে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আজ শুক্রবার (২৮ মে) রূপরেখাটি প্রকাশ করা হয়।
রূপরেখায় পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করে জানানো হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অনলাইন ও সরাসরি (ইন-পারসন) উভয় পদ্ধতি চালু রয়েছে। লকডাউন অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস হয় এবং লকডাউন উঠে গেলে ইন-পারসন ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক দেশে ল্যাব সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিষয়গুলোর (মানবিক, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসা ইত্যাদি) তত্ত্বীয় ক্লাস লকডাউন অনলাইনে এবং লকডাউন উঠে গেলে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষা লকডাউন উঠে গেলে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাত দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
১) যেকোনও বিষয়ের (তত্ত্বীয়/ব্যবহারিক) পাঠদান (ইন-পারসন/অনলাইন) সম্পন্ন হওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে চূড়ান্ত অনলাইন মূল্যায়ন (ইন-পারসন/অনলাইনের মাধ্যমে) সম্পন্ন করতে হবে। তবে শুধু যেসব ব্যবহারিক কোর্স হাতে-কলমের কাজ ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয় তা অবশ্যই সুবিধাজনক সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইন-পারসন ক্লাস করে সম্পন্ন করতে হবে।
২) যেকোনও মূল্যায়নে পাস/ফেল পদ্ধতি এক সেমিস্টার বা দুই সেমিস্টার করা হলেও দীর্ঘমেয়াদিতে এ মূল্যায়ন কখনও সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করে না এবং এটা করা সমীচীন নয় বিধায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সকল বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সত্যিকারের মেধা ও মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান পদ্ধতি ও স্কেলে গ্রেড প্রদান করতে হবে।
৩) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জন্য উপযোগী অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুস্পষ্ট পদ্ধতি গ্রহণ করবে এবং বাস্তবতার নিরিখে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ; ইন্টারনেট স্পিড, ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল টুল, কোশ্চেন সেটিংস, প্রশ্নপত্র মডারেশন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বোর্ড এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটি, অসাধু পন্থা অবলম্বন, আন্তর্জাতিকভাবে ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা এই বিষয়গুলো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদিত নীতিমালা শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে অবহিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
৪) সৃজনশীল কাজ, সৃজনশীল কুইজ/বিভিন্ন সেটের বহু নির্বাচনি প্রশ্নমালা, সময়াবদ্ধ শ্রেণি পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এই চার পদ্ধতি অনুসরণ করে যেকোনও তত্ত্বীয় বিষয় এবং হাতে কলমের কাজ করার প্রয়োজন নেই এমন ব্যবহারিক বিষয়ে চূড়ান্ত নম্বর/গ্রেডিং অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে প্রদান করতে হবে।
কুইজ, শ্রেণি পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের ডিভাইসের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন উভয়টি চালু থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তথ্যাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট নিশ্চিত হবে এমন স্থানে অবস্থান করে অনলাইন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করবে।
৫) ব্যবহারিক ক্লাসের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইমেইলে এক্সপেরিমেন্টের পুরোনা ডেটা প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এসব ডেটা এনালাইসিস করে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে পাঠাবে। কমিটি মনে করে যে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষার্থীরা লকডাউনমুক্ত অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প সময়ে ক্যাম্পাসে ল্যাবের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে।
৬) ল্যাবভিত্তিক নয় এমন থিসিস/প্রজেক্ট অনলাইনে সুপারভাইজ করা যেতে পারে এবং ল্যাবভিত্তিক থিসিস/প্রজেক্ট-এর হার্ডকপি গৃহীত হওয়ার পর অনলাইনে ডিফেন্স/ভাইবা নেওয়া যেতে পারে।
৭) কমিটি মনে করে যে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয় স্পিড নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে পারে।